ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখবে এই ৫টি ফল!

Uric acid

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড বা হাইপারইউরিসেমিয়া এমন একটি অবস্থা, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জয়েন্ট ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই সমস্যার নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি খাদ্যাভ্যাসও বড় ভূমিকা রাখে। সুখবর হলো, কিছু নির্দিষ্ট ফল শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড স্বাভাবিকভাবে বের করে দিতে সাহায্য করে, প্রদাহ কমায় এবং দেহের ডিটক্স প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। নিচে এমন পাঁচটি ফলের কথা তুলে ধরা হলো, যেগুলো নিয়মিত খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে।

সাইট্রাস ফল: লেবু ও কমলার জাদু
লেবু ও কমলার মতো সাইট্রাস ফলগুলো ভিটামিন সি-তে ভরপুর, যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ভিটামিন সি কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড নির্গমনকে ত্বরান্বিত করে। বিশেষ করে লেবুর রস শরীরকে অ্যালকালাইন করে অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে লেবুর পানি খাওয়া বা দুপুরের মধ্যে একটি কমলা খাওয়া এই উপকারিতা বাড়াতে পারে। সায়েন্স ডিরেক্ট-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুর রস রক্তের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।

বেরি: ছোট ফল, বড় উপকার
স্ট্রবেরি ও ব্লুবেরির মতো বেরিগুলো শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিতেও অনন্য। এতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং পলিফেনল, যা প্রদাহ কমায় এবং ইউরিক অ্যাসিডের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়া বেরির উচ্চ পানি-সমৃদ্ধ গঠন কিডনির মাধ্যমে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। সকালের দই, স্মুদি কিংবা ফলের সালাদে বেরি যোগ করলেই সহজে পুষ্টি পাওয়া যায়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পলিফেনলের উচ্চ গ্রহণ রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়।

চেরি: ইউরিক অ্যাসিড কমানোর কার্যকর ফল
দেখতে ছোট হলেও ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে চেরি অন্যতম কার্যকর ফল। এতে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন নামের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ কমিয়ে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাস করে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত চেরি খেলে ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

কলা: কিডনি রক্ষার প্রাকৃতিক সহায়ক
পটাশিয়ামসমৃদ্ধ কলা কিডনিকে আরও দক্ষভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং ইউরিক অ্যাসিড নির্গমন বাড়ায়। একই সঙ্গে কলায় পিউরিনের পরিমাণ কম, যা ইউরিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয় না। ফলে এটি গাউট বা উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য আদর্শ ফল। পাবমেড সেন্ট্রাল-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কলা ও অন্যান্য ফল নিয়মিত খেলে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির ঝুঁকি কমে।

আনারস: গাউটের ব্যথা উপশমে কার্যকর
আনারসে রয়েছে ব্রোমেলেইন নামের একটি এনজাইম, যার প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক গুণ জয়েন্টের ব্যথা ও গাউটের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং কিডনির কার্যকারিতা বাড়িয়ে ইউরিক অ্যাসিড নির্গমনকে সহজ করে তোলে। এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টানা পাঁচ থেকে সাত দিন আনারসের রস পান করেছেন, তাদের গাউটজনিত ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

যদিও এই ফলগুলো স্বাভাবিকভাবে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, তবুও খাদ্যাভ্যাসে বড় কোনো পরিবর্তন আনার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক পরিমাণে এবং নিয়মিত গ্রহণই হতে পারে আপনার দেহের ভারসাম্য রক্ষার সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।