এনাল ফিসারের চিকিৎসা

0
1175
Spread the love

এনাল ফিসারের একটি অতি সাধারণ পায়ুপথের রোগ। জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ এ রোগে ভুগে থাকেন। এনাল ফিসারের প্রধান লক্ষণ হলো পায়ুপথের ব্যথা। মল ত্যাগের পর পায়ুপথের ব্যথা শুরু হয়, এটি কখনো তীব্র ছিঁড়ে যাওয়ার মতো ব্যথা, কখনো কেটে যাওয়ার মতো, কখনো পিন দিয়ে খোঁচার মতো, কখনো বা ভারি ভোঁতা ধরনের ব্যথা হয়। এ ছাড়া পায়ুপথে জ্বালাপোড়া করে। প্রথম দিকে মল শক্ত হলে ব্যথা-জ্বালা-পোড়া শুরু হয়। মল ত্যাগের পর ব্যথা শুরু হয় বলে রোগী মল ত্যাগে ভয় পায়। ফলে  মল আরও কঠিন হয়ে ওঠে। ফলে পরবর্তী মল ত্যাগের সময় ব্যথা-জ্বালা-পোড়া আরও বেড়ে যায়। এটিকে একটি বিষ চক্রও বলা যায়। ব্যথার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, চুলকানি, পায়খানার রাস্তা ভেজা ভেজা থাকে ইত্যাদি নানা সমস্যা হতে পারে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এনাল ফিসারের রক্ত খুব বেশি যায় না। অল্প রক্ত মলের সঙ্গে লেগে লেগে যায়। কদাচিৎ রক্ত যায়।

কারণসমূহ : এনাল ফিশার হওয়ার জন্য মূলত দায়ী হলো কোষ্টকাঠিন্য। মলত্যাগের সময় কোত/বেশি চাপ দেওয়ার অথবা মল শক্ত হয়ে বের হওয়ার সময় মলদ্বার ফেটে যায় বা ঘা হয়। আঁশযুক্ত খাদ্য না খাওয়া বা কম খাওয়ার কিংবা ফলমূল বা শাকসবজি কম খাওয়া মল শক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। ঘন ঘন মলত্যাগ কিংবা ডায়রিয়া হওয়া।

এনাল ফিসারের চিকিৎসা : প্রাথমিক পর্যায়ে এনাল ফিসারের চিকিৎসা ওষুধের মাধ্যমে করা হয়। স্থানিক কিছু মলম ও মল নরম করার ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু এনাল ফিসার একটু বেশি দিন হয়ে গেলে এটি ক্রনিক হয়ে যায়, তখন আর ওষুধে কাজ হয় না। কারণ এ সময়ের মধ্যে পায়ুপথ সংকুচিত হয়ে যায়। তখন অপারেশনের মাধ্যমে পায়ুপথটি ঠিক করে দিতে হয়। এই অপারেশনের নাম Laterl Internal Sphincterouomy (LIS). আগে একটি ছোট কাটার মাধ্যমে এই অপারেশন করা হতো। কিন্তু বর্তমানে কাটাছেঁড়া ছাড়াই এই চিকিৎসা করা হয়। লেজারের মাধ্যমে একটি বিশেষ ধরনের রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে পায়ুপথে বড় করে দেওয়া হয়। এতে কাটাছেঁড়া বা রক্তপাত নেই, ব্যথাও ন্যূনতম। অপারেশনের পরপরই রোগী স্বাভাবিকভাবে মল ত্যাগ করতে পারেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাসায় ফিরে যেতে পারেন। দুই দিনের মধ্যে স্বাভাবিক কাজে ফিরে যেতে পারেন। রোগীর অপারেশনের আগে তীব্র ব্যথা

জ্বালাপোড়া তাৎক্ষণিকভাবে কমে যায়। অনেক দিনের মল ত্যাগের কষ্ট ভালো হয়ে যায়। সুতরাং এটি আধুনিক চিকিৎসা, যার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে সুস্থ হওয়া যায়। তাই এসব বিষয়ে আমাদের অবহেলা না করে সচেতন ও যত্নবান হতে হবে।

লেখক : অধ্যাপক ড. এস এম এ এরফান,

কোলোরেক্টাল সার্জন, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে