করোনার টিকা নিতে বস্তি ও গ্রামের মানুষের অনীহা : সমীক্ষা

0
798
Spread the love

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যখন দেশব্যাপী করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়, তখন জনগণের মাঝে টিকা নেয়ার বিষয়ে বেশ আগ্রহ ছিল। তবে টিকাদানের ক্ষেত্রে শহরের বস্তি এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলের অংশগ্রহণকারীদের মাঝে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখা যায়। বস্তি ও গ্রামে বসবাসকারী এক-তৃতীয়াংশ মানুষের করোনা টিকার নিবন্ধন করতে অনীহা রয়েছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) একদল গবেষক ‘কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনেশন : উইলিংনেস অ্যান্ড প্র্যাকটিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তাদের এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন।

গত জানুয়ারির শেষ থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে করা তিনটি জরিপের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণাটি করা হয়। জাতীয় পর্যায়, তরুণ জনগোষ্ঠী ও শহুরে বস্তিবাসীদের মধ্যে করোনা টিকা নেয়ার আগ্রহ কেমন সে বিষয়ে জানতে এই জরিপ করা হয়। শহরের বস্তিবাসী এবং গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে টিকার রেজিস্ট্রেশন করার ধরন এবং এ সংক্রান্ত আচরণ পর্যালোচনা করাও গবেষণার একটি লক্ষ্য ছিল।

যারা করোনার ভ্যাকসিন নিতে অনাগ্রহী তাদের অধিকাংশই জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করেন না। এমন ধারণা শহরের বস্তিবাসীদের মধ্যেই সবচেয়ে প্রকট।

জরিপে অংশ নেয়া শহরের বস্তি ও গ্রামের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ করোনা ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে যারা ব্যাপারটি জানতেন, তারা অনেকেই বুঝতে পারেননি ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য তারা উপযুক্ত কি-না। তাই রেজিস্ট্রেশন করেননি তারা।

বিআইজিডির রিসার্চ ফর পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (আরপিজি) প্রধান গবেষক মেহনাজ রাব্বানী, গবেষণা সহযোগী অভিন্ন ফারুক এবং ইশমাম আল কুদ্দুস ওয়েবিনারে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারীরা আলোচনায় অংশ নেন। এই ভার্চুয়াল ইভেন্টের উদ্দেশ্য ছিল, টিকাদানের ক্ষেত্রে কোনো গোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বা টিকার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু এবং এ সম্পর্কিত ব্যাপারে কীভাবে কাজ করা যেতে পারে, তা সম্পর্কে নীতিনির্ধারকদের ধারণা দেয়া। এছাড়া গবেষণার প্রতিবেদনও ওয়েবিনারে প্রকাশ করা হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের গ্লোবাল আরবানিজমের প্রফেসর ড. ডায়ানা মিটলিন বলেন, আমরা জানি যারা সমাজ-কাঠামোর নিচের দিকে থাকেন তারা প্রায়ই অবহেলার সম্মুখীন হন। তারা তাদের প্রয়োজনীয় সেবাটুকুও পান না, ফলে সন্দেহ তৈরি হয়। তাই স্বাস্থ্যসেবাকে ঘিরে বার্তা প্রদান এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরির বেশ ব্যাপক একটি গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এটি ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের মাঝে তৈরি হওয়া উদ্বেগ ও নেতিবাচক মনোভাব কমাতে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়, এই জনগোষ্ঠীর সাথে সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নেও এ ধরনের পদক্ষেপ কাজে লাগে।

এক্সপ্যান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশনের মহাপরিচালক ড. শাকিলা সুলতানা জানান, রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত যোগাযোগের গতি কমিয়ে আনাটা আমাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে নেয়া একটি সিদ্ধান্ত, যেহেতু আমাদের এখন ভ্যাকসিন স্বল্পতা রয়েছে। ভ্যাকসিন সরবরাহে বাধা দূর হওয়া মাত্রই আমরা সুষ্ঠু যোগাযোগের মাধ্যমে এটা প্রদানের ব্যবস্থা নেব।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, আমাদের গবেষণায় এটা দেখা গেছে যে, শহরের বস্তি অঞ্চল এবং তরুণ জনগোষ্ঠী ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘হটস্পট’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আমরা যত সামনে যাবো, গণ-টিকাদান কর্মসূচির ওপরে কার্যকর গবেষণার প্রয়োজন হবে এবং বিআইজিডি সেই গবেষণার অংশ হতে খুবই আগ্রহী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে