চিকিৎসককে জরিমানা, ইউএনও প্রত্যাহার

0
743

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় চিকিৎসককে জরিমানাকারী ইউএনও মো. নজরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কে.এম. আল-আমীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দেওয়া হয়। প্রত্যাহার হওয়া ইউএনও মো. নজরুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিতে বলা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রোগী দেখতে চেম্বারে যাওয়ার সময় ডা. ফরহাদ কবিরকে জরিমানা করেন প্রত্যাহারকৃত ইউএনও মো. নজরুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামকে প্রত্যাহারের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ হাতে পেয়েছি।

জানা যায়, সাতকানিয়া পৌরসভা এলাকায় রোগী দেখতে চেম্বারে যাওয়ার সময় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ডা. ফরহাদ কবির নামের এক চিকিৎসকের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ডা. ফরহাদ কবির লকডাউনে চিকিৎসকদের চলাচলে বিধিনিষেধ না থাকার বিষয়টি ইউএনওকে বললে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ডাক্তারদের সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‌‘আমি চাইলে আপনাকে জেল দিতে পারি। তা করলাম না। দ্রুত জরিমানা দিয়ে চলে যান।’ তখন বাধ্য হয়ে ডা. ফরহাদ কবির ১ হাজার টাকা জরিমানা দেন।

এদিকে, ঘটনার পরদিন ডা. ফরহাদ কবিরের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের বিষয়টি স্বাচিপ’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরকে অবহিত করেন। পরে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের বিষয়টি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে জানান। পরে রোববার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সাতকানিয়ার ইউএনও মো. নজরুল ইসলামকে প্রত্যাহারের আদেশ প্রদান করেন।

স্বাচিপ’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান জানান, করোনা মোকাবিলায় ডাক্তার, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সকলকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। ডাক্তারদের নির্বিঘ্নে চলাচলের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকদের চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে অসুস্থ মানুষ ও তাদের স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়বেন। ইউএনও নজরুল ইসলাম ডা. ফরহাদ কবিরের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরও তাকে জরিমানা করাটা খুবই দুঃখজনক। আর পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারলে তিনি মামলায় ফরহাদ কবিরের নামের আগে ডাক্তার লিখতেন না। এ ছাড়া চেম্বারে রোগী দেখতে যাওয়ার সময় একজন ডাক্তারকে সংক্রমণ আইনে মামলা কীভাবে দেন? লকডাউনে ডাক্তারদের চলাচলে সরকারিভাবে কোনো ধরনের বাধা নেই। এরপরও একজন ডাক্তার রোগী দেখার জন্য চেম্বারে যাওয়ার সময় ইউএনও’র এমন আচারণ অত্যন্ত দুঃখজনক।

জরিমানার শিকার হওয়া সাতকানিয়ার মির্জারখীল এলাকার বাসিন্দা ডা. ফরহাদ কবির সাংবাদিকদের জানান, আমি পৌরসভার নাছির ফার্মেসি এবং মক্কা ফার্মেসিতে নিয়মিত চেম্বার করি। ঘটনার দিন আমি চেম্বার শেষ করে ফিরছিলাম। ওই সময় একজন ইমার্জেন্সি রোগী আসার বিষয়ে ফোন পেয়ে মাঝপথ থেকে আবার মোটরসাইকেলযোগে চেম্বারে যাচ্ছিলাম। তখন সাতকানিয়া পৌরসভার কলেজ রোডের মুখে ইউএনওর সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় ইউএনও’র সঙ্গে থাকা লোকজন সিগন্যাল দিলে আমি মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আমার পরিচয় দেই। ডাক্তার পরিচয় পাওয়ার পর ইউএনও কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনারা লকডাউন দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। আমরা লকডাউন সফল করতে পারি না বলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আর এখন আপনারা লকডাউন মানছেন না।’ এরপর ইউএনও’র সঙ্গে থাকা এক লোক আমার কাছ থেকে মোটরসাইকেলের চাবিটি নিয়ে নেন। একপর্যায়ে ইউএনও জানান, আমাকে ২ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লকডাউনে বের হয়েছেন এজন্য।’ তখন আমি উনাকে ডাক্তারদের চেম্বারে যাওয়া আসায় বিধিনিষেধ না থাকার বিষয়ে বলি। এতে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘আমি চাইলে আপনাকে জেল দিতে পারি। তা করলাম না, ১ হাজার টাকা জরিমানা দেন।’

ডাক্তার ফরহাদ কবির আরও জানান, অনেক লোকের সামনে তিনি ডাক্তারদের সম্পর্কে অনেক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এক পর্যায়ে মামলা লিখে আমার হাতে দিয়ে এক হাজার টাকা দিতে বলেন। তখন আমি টাকা দিয়ে দেই। এরপর ইউএনও বলেন, ‘সাংবাদিকরা ছবি উঠান, ডাক্তারকে যে জরিমানা করছি এটা পত্রিকায় দিতে হবে। পরে অনেকে মুঠোফোনে আমার ছবি তুলেছেন। এরকম অপমানিত আমি জীবনে হইনি। আমি বুঝতে পারছি না একজন ইউএনও কিভাবে এমন খারাপ আচারণ করতে পারেন?’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে