দুশ্চিন্তা কাটছে টিকা নিয়ে

0
620
Spread the love

টিকার সংকট কাটাতে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই কোনো না কোনো অগ্রগতি ঘটছে। গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়ার টিকা স্পুৎনিক ভি জরুরি আমদানি ও ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এক সভায় এই অনুমোদন দেওয়ার পর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আশা করছি মে মাসের মধ্যেই ৪০ লাখ ডোজ স্পুৎনিক ভি দেশে আসবে। করোনার এই টিকা আনতে এখন আর আইনগত কোনো বাধা নেই।’

শুধু স্পুৎনিক ভিই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসন, চীনের সিনোফার্ম (বেইজিং) ও সিনোভ্যাক—এই ছয়টি টিকা জরুরি অনুমোদন দিতে সরকারের প্রতি গত বৃহস্পতিবার সুপারিশ করেছিল দেশে টিকা অনুমোদন সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক গ্রুপ ‘নাইট্যাগ’। এরই মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী অবস্থান থেকে টিকাগুলো জরুরি আমদানি ও ব্যবহারে নীতিগত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। এখন এই টিকাগুলো আমদানি বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওই টিকাগুলোর যেকোনোটির ক্ষেত্রে যেকোনো সময় অনাপত্তিপত্র দিতে পারবে বলে গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।

এর আগে গত ৮ জানুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উত্পাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ‘কোভিশিল্ড’ আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। সেই টিকা দিয়েই ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। তবে সম্প্রতি টিকার আমদানি ঘাটতির কারণে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। সেই সংকট কাটাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যেকোনো সময় বাংলাদেশে টিকা পাঠাতে পারে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অন্য পাঁচটি টিকার আবেদনের সঙ্গে কারিগরি তথ্য-উপাত্ত পূর্ণাঙ্গভাবে জমা না দেওয়ায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সেগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারছে না।

এদিকে ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কবে আসবে, সেটা এখনো নিশ্চিত না হলেও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে সরকার ও বেক্সিমকো গ্রুপ। এরই মধ্যে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের হাতে থাকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ছয় কোটি ডোজ টিকা অন্য দেশকে দিয়ে দেবে। সেখান থেকে ভারত এক কোটি ডোজ টিকা পাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে ওই খাত থেকে কিছুটা টিকা পাওয়ার জন্য। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, সরকার আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও অক্সফোর্ডের কিছু টিকা পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং চিঠিও পাঠিয়েছে।

রাজধানীর মহাখালীর বিসিপিএস কমপ্লেক্সের লনে গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি, লকডাউন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, নমুনা পরীক্ষা ও টিকার বিষয়ে বিস্তারিত জানান এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

মন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে উত্পাদনের জন্য আরো কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। কোন কম্পানির সঙ্গে উত্পাদনের জন্য চুক্তি হবে, সেটা এখনো ঠিক হয়নি। দেশের দু-তিনটি কম্পানির সক্ষমতা আছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের সেরাম থেকে অক্সফোর্ডের টিকা আনতে আমরা টাকা দিয়েছি। কিন্তু ভারতে সমস্যার কারণে সেটা পেতে দেরি হচ্ছে। বেক্সিমকো চেষ্টা করছে, আমরাও চেষ্টা করছি। যদিও দিনক্ষণ জানতে পারছি না, তবে আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যেই টিকা পাব। এর পরও আমরা শুধু এখন আর ভারতের টিকার জন্য বসে নেই। আমরা আমেরিকা, চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছি। চীনের কাছ থেকেও টিকা পাব। তাদের সঙ্গেও এখানে উত্পাদনের কথাবার্তা চলছে। তবে টিকা নিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক ও ভূ-রাজনীতি চলছে। ১০টি ধনী দেশের হাতেই সবচেয়ে বেশি টিকা আটকে রয়েছে। অনেকগুলো দেশ এখনো টিকা হাতেই পায়নি। সেখানে আমরা অনেকটা টিকা দিয়েও ফেলেছি।’

এদিকে গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘টিকা ও অক্সিজেন নিয়ে কাজ করছি। আশা করি সংকট হবে না।’

অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত থেকে বাকি টিকা আনার জন্য যোগাযোগ চলছে। অন্য দেশগুলো থেকেও টিকা আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ছাড়াও কোনো টিকা দেশে আনতে চাইলে সেটা জরুরি ব্যবহারের জন্য এখন অনুমোদন দেওয়া যাবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ছেড়েছে। আমরা সেখান থেকেও আনার জন্য চেষ্টা করব।’ চীনের টিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চীনকে জানিয়েছি, জরুরি ভিত্তিতে আমাদের টিকা লাগবে। চীনও বলেছে, বাংলাদেশে টিকা সহায়তা নিয়ে তারা কাজ করবে।’

এদিকে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বিদেশ থেকে টিকা আসতে দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট অন্য সূত্রগুলো এর আগেই আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চীনের টিকা আসার ব্যাপারে আশাবাদী।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, গতকাল রাশিয়ার টিকার অনুমোদন দেওয়ার পাশাপাশি চীনের টিকার ব্যাপারেও অগ্রগতি হয়েছে। দুটির ক্ষেত্রেই সরাসরি সরকার টু সরকার যোগাযোগ হচ্ছে। টিকা আনার ক্ষেত্রে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী রাখা হয়নি। তবে স্থানীয়ভাবে উত্পাদনের ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাদা চুক্তির প্রশ্ন রয়েছে। সেটা করতে আরো প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

ওই সূত্র জানায়, চীন, রাশিয়া ছাড়াও আমেরিকার মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসন ও ফাইজারের টিকা আনতে যারা আবেদন করেছে, তারা এখন পর্যন্ত সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেয়নি। কেউ কেউ শুধু এক পাতার আবেদন করেছে। সেটার ভিত্তিতেই সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অবশ্যই প্রতিটি টিকার বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত দিতে হবে। এগুলো জমা দিলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে যতটুকু সময় লাগে, সেই সময়টুকুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে প্রাইভেট সেক্টর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কম্পানির টিকা আনার জন্য প্রাথমিক আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে আমাদেরকে সংশ্লিষ্ট টিকার সব প্রটোকল ও তথ্য-উপাত্ত জমা দিতে বলা হয়েছে। আমরাও সেগুলো জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি চালাচ্ছি। হয়তো এক-দুই দিনের মধ্যেই জমা দেওয়া হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে