কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের ছয় কর্মকর্তাও মামলার আসামি
নকল এন৯৫ মাস্ক সরবরাহের মামলায় জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাককে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে তাকে গ্রেফতার করে দুদক। নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় আবদুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দুদকসূত্র জানিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) ছয় কর্মকর্তা ও আবদুর রাজ্জাককে আসামি করে গতকাল সকালে মামলাটি করেন দুদকের উপপরিচালক নূরুল হুদা। মামলায় সিএমএসডির যে ছয় কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- উপপরিচালক ডা. জাকির হোসেন, সহকারী পরিচালক (স্টোরেজ অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন) ডা. শাহজাহান সরকার, চিফ কো-অর্ডিনেটর ও ডেস্ক অফিসার জিয়াউল হক, ডেস্ক অফিসার (বর্তমানে মেডিকেল অফিসার, জামালপুর) সাব্বির আহমেদ, স্টোর অফিসার (পিআরএল ভোগরত) কবির আহমেদ ও সিনিয়র স্টোরকিপার ইউসুফ ফকির। দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের জানান, গ্রেফতারের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. নূরুল হুদা আসামি আবদুর রাজ্জাককে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন আইনজীবীরা। তবে ওকালতনামায় স্বাক্ষর না থাকায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শুনানি করতে পারেননি। পরে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, চিকিৎসক-নার্স ও অন্যদের করোনা থেকে রক্ষার জন? এন৯৫ মাস্ক সরবরাহে জেএমআই গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার। জেএমআই গ্রুপ ২০ হাজার ৬১০টি মাস্ক সরবরাহ করে। পরে দেখা যায়, ওই মাস্কগুলো এন৯৫ মাস্ক নয়। আসামিরা নকল এন৯৫ মাস্ক সরবরাহ ও গ্রহণ করেন এবং একই তারিখে অসদুদ্দেশ্যে ওই নকল মাস্ক ১০টি প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্স ও অন্যদের মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, পরস্পর যোগসাজশে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার অসদুদ্দেশ্যে আসামিরা নকল মাস্ক সরবরাহ ও গ্রহণ করেন। তারা প্রকৃত এন৯৫ মাস্কের পরিবর্তে ‘জেএমআই ফেস মাস্ক’ মুদ্রিত বড় কার্টনের মধ্যে ‘এন৯৫ ফেস মাস্ক’ মুদ্রিত ছোট বক্সে এসব মাস্ক সরবরাহ করেন। ‘জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড’-এর উৎপাদিত ২০ হাজার ৬১০ পিস নকল এন৯৫ মাস্কের গায়ে কোম্পানির নাম, মাস্কের নাম বা অন্য কোনো লেখা/ছবি মুদ্রণ ছিল না। সিএমএসডি পরে তা ১০টি প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করে, যা দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এর আগে নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনা, সেসব সরঞ্জাম বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১০ জুন অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরপর ১ জুলাই জেএমআই, তমা কনস্ট্রাকশন, এলান করপোরেশন, মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেড ও লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোক্র্যাট লিমিটেডের পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তাকে তলব করে চিঠি পাঠায় দুদক। তলব নোটিসে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা কভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহের নামে অন্যদের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বক্তব্য শোনা ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। এরপর ৮ জুলাই মেসার্স জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সমন্বয়কারী (মেডিকেল টিম) মতিউর রহমানকে প্রায় ছয় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের অনুসন্ধানকারী দল।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন