ফুসফুসের চিকিৎসায় অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করলেন বিজ্ঞানীরা। ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এতদিন যে রক্তের গ্রুপ মেলানোর দরকার হতো, এখন আর সেটির প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এতদিন সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ ছিল, যার ফুসফুস নেওয়া হবে তার রক্তের গ্রুপের সঙ্গে বেশির ভাগ সময়েই মেলে না যার ফুসফুস প্রতিস্থাপিত হবে তার রক্তের গ্রুপ।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই প্রথম জানাল, আর রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে একজনের ফুসফুস অন্যের দেহে বসাতে হবে না। যেকোনও রক্তের গ্রুপের দাতারই ফুসফুস নেওয়া যাবে প্রতিস্থাপনের জন্য। শুধু প্রতিস্থাপনের আগ মূহুর্তে দাতার রক্তের গ্রুপটিকে গ্রহীতার রক্তের গ্রুপে বদলে নিতে হবে।
শুক্রবার গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’-এ।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এর ফলে প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত ফুসফুসের আর অভাব হবে না। প্রতিস্থাপনের জন্য রোগীকে আর দীর্ঘদিন অপেক্ষাও করতে হবে না।
গবেষকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আমেরিকায় এই মুহূর্তে প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত একই গ্রুপের ফুসফুস পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন অন্তত এক লাখ রোগী, যাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফুসফুস প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন। যত রোগী প্রতিস্থাপনের জন্য ফুসফুসের অপেক্ষায় ছিলেন ২০১৭ সালে তাদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সঠিক গ্রুপের রক্তের ফুসফুস পেয়েছিলেন।
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, প্রতিস্থাপনের আগে দাতার রক্তের গ্রুপ গ্রহীতার রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে ব্যবহার করা হবে একজোড়া উৎসেচক বা এনজাইম। এর একটি হল-‘এফপিগ্যালন্যাক ডিঅ্যাসিটাইলেজ’। অন্যটি হচ্ছে- ‘এফপিগ্যালাক্টোস্যামিনিডেজ’।
দাতার ফুসফুসটির রক্তের গ্রুপকে গ্রহীতার শরীরে থাকা যে অ্যান্টিজেন চিনতে পারে বলে অন্য গ্রুপের রক্ত দেওয়া হলে মানবশরীর তা প্রত্যাখ্যান করে সেই অ্যান্টিজেনটিকে যৌথভাবে কাজ করে সরিয়ে দেয় এই দু’টি উৎসেচক।
গবেষকরা আট রকমের রক্তের গ্রুপের ফুসফুস নিয়ে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, ওই দুটি উৎসেচক যৌথভাবে চার ঘণ্টার মধ্যেই অ্যান্টিজেনটিকে সরিয়ে দিতে পারে। তাও আবার নিখুঁতভাবে। এর ফলে, ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই যেকোনও গ্রুপের রক্তের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে।
সূত্র: সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন, লাইভ সায়েন্স, সায়েন্স অ্যালার্ট