বৃহদন্ত্রের ক্যান্সারেও সচেতনতা দরকার

0
35
বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার, একটি মারাত্মক ব্যাধি যা নানা ভোগান্তি ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী বৃহদন্ত্র বা কলোরেক্টাল ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী তৃতীয় সর্বোচ্চ ক্যান্সার যা ক্যান্সার ঘটিত মৃত্যুর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ। ২০২০ সালে প্রায় ২০ লাখ নতুন বৃহদন্ত্র ক্যান্সার নির্ণীত হয়েছিল এবং প্রায় ৯.৩ লাখ লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন।
বৃহদন্ত্রের কোষসমূহ যখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে তখনই এ রোগের সূত্রপাত হয়। কোষসমূহ বৃদ্ধির ফলে বৃহদন্ত্রের অন্ত দেয়ালে ছোট পলিপ তৈরি হয় যা প্রাথমিক ভাবে ক্যান্সার নয়, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।
রোগটি পাশ্চাত্য দেশ সমূহে বেশি দেখা গেলেও বর্তমানে আমাদের জীবনাচরণের পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত দেশসমূহে উক্ত রোগের আক্রমণ কমে আসছে মূলত সচেতনতা ও স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের কারণে।
ঝুঁকি সমূহ
১। বয়োবৃদ্ধিঃ বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে রোগেটির প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায় এবং পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সেই প্রধানত দেখা দেয়।
২। কোলোরেক্টাল পলিপঃ  বৃহদন্ত্রে পলিপ ৫-১০ বৎসরের মধ্যে ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।
৩। বৃহদন্ত্র ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস।
৪। ঝুঁকিপূর্ণ
জীবনাচারণ
ক) অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যেমনঃ খাদ্যে অধিক পরিমাণ প্রক্রিয়াজাত মাংস, ফাস্টফুড, সবজি ও ফলমূলবিহীন খাবার।
খ) দেহের ওজনাধিক্য।
গ) ব্যায়ামহীন আরামদায়ক জীবন।
ঘ) ধূমপান ও মদ্যপান।
লক্ষণ সমূহ
প্রায়শই রোগটি লক্ষণহীন থাকে। তবে লক্ষণসমূহহের মধ্যে মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া বা অনিয়মিত মলত্যাগ, মলে রক্ত বা কালো পায়খানা, রক্তশূন্যতা, অতিদুর্বলতা, পেটে ব্যাথা বা পেট ফুলা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।
প্রতিরোধে ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
১। কোলোরেক্টাল ক্যান্সার স্ক্রিনিংঃ স্ক্রিনিং হলো এমন কিছু পরীক্ষা যা দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে বা ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার আগে রোগটি খুঁজে নেয়া এবং চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ নিরাময়ে সাহায্য করা। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি ৪৫ বছর বয়সেই স্ক্রিনিং টেস্ট করার উপদেশ দিয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে স্ক্রিনিং টেস্ট হলো সবচেয়ে ভালো ও আধুনিক পদ্ধতি যা দিয়ে রোগটি প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা যায়।
ক) মল পরীক্ষা-(Fecal occult blood test/ Fecal immunochemical test) মলে লুক্কায়িত রক্তের উপস্থিতি নির্ণয় করে এবং বৃহদন্ত্রে পলিপ বা ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
খ) কলোনস্কপি
পরীক্ষাঃ
এ পরীক্ষার মাধ্যমে বৃহদন্ত্রে পলিপ বা ক্যান্সারের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। পলিপ মানেই ক্যান্সার নয় কিন্তু সময়ের বিবর্তনে পলিপ ক্যান্সারে পরিণত হয়। তাই কলোনস্কপি দ্বারা পলিপ অপসারণের মাধ্যমে ক্যান্সার ঝুঁকি প্রতিরোধ করা যায়। এমন কি ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণীত হলে পূর্ণ চিকিৎসাও করা যায়।
২। খাবারের প্রচুর শাক সবজি, ফলমূল ও পূর্ণ অন্ন বা শস্য দানার উপস্থিতি ক্যান্সার ঝুঁকি কমায়। অবশ্যই লাল মাংসের পরিমান এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার সীমিত করতে হবে।
৩। নিয়মিত ব্যায়াম।
৪। উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী শরীরের ওজন ঠিক রাখা।
৫। ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন। সর্বোপরি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে রাখা উচিত।
লেখক :

অধ্যাপক ডা. বিমল চন্দ্র শীল

মেডিসিন, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কনসালটেন্ট (গ্যাস্ট্রোএন্টারলজী), ল্যাবএইড হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।  

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে