মুখের আলসার

0
1393
Spread the love

পাকস্থলী বা অন্ত্রের ক্যান্সারের কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু মুখের আলসার এর কথা শুনেছেন কি? মুখের ভেতরে, গালের নরম অংশে, জিহবার পাশে এক ধরনের ঘা দেখা যায়, যার নাম এ্যাপথাস আলসার। ছোট একটি গোলাকার অংশ সাদাটে হয়ে ওঠে। আর সাদা অংশটার ভেতরে পুঁজ জমে। পুঁজের চার পাশে হালকা একটা সিমানা থাকে। গোলাকার বা ছোট ডিম্বাকৃতির অংশে যা হয়।

এফথাস আলসার এর প্রকারভেদঃ
স্বাভাবিক এফথাস এছাড়াও এফথাস আলসারের কয়েকটি রকমের আছে ।
এফথাসের আকার যদি প্রায়ই ১ সে.মি. এর বেশি হয় এবং ভালো হতে সময় বেশি লাগে তখন একে মেজর এফথাস আলসার বলা হয়। মেজর এফথাস আলসার হলে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, কারণ এটি দেখতে কিছুটা ক্যান্সারের প্রথম দিকের ঘায়ের মতো এবং খুবই যন্ত্রণাদায়ক হয়। আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আরেকটি ধরন আছে যেখানে ঘন ঘন হতে থাকে। প্রত্যেক মাসে একবার বা দু’বার। এটাকে বলা হয় রিকারেন্ট এপথাস আলসার। আর তৃতীয় আরেকটি হল হারপেটিকফর্ম এপথাস। যেখানে ছোট ছোট আকারের অনেক এপথাস একসঙ্গে হয়।

লক্ষণঃ
১. মুখে আলসার হলে ব্যথা, জ্বলুনি, জ্বর এবং লসিকা গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে।
২. অনেক সময় মুখের একাধিক জায়গায় এই ঘা হয়। তখন খাবার গিলতে কথা বলতে বা মুখে হা করতে কষ্ট হয়।

কারণঃ
মুখের আলসার হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। কিছু কারণ চিহ্নিত করা যায় যারা মুখের আলসার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে, যেমন- মুখে আঘাত পেলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে, শরীরে হরমোন পরিবর্তন হলে, অনেক বেশি চাপের মধ্যে থাকলে , অত্যাধিক ধূমপান , বংশগত কারণ , নির্দিষ্ট কোন ওষুধের জন্য , অ্যামোনিয়া হলে , মুখে ব্যবহারের ভুল পণ্য ব্যবহার করলে, ফুড এলার্জি এবং ভাইরাসের ইনফেকশন এসব।

প্রতিকারঃ
বেশিরভাগ মানুষের মুখের ঘা ৭ -১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। এজন্য বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা নিতে পারেন।
১. মুখের ঘা প্রতিকারে অ্যালোভেরা সবচেয়ে বেশি কার্যকর। প্রাকৃতিক উপায়ে এতে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল বের করে মুখের ঘা এর মধ্যে দিনে কয়েকবার লাগান এবং এর জুস দিয়ে দিনে তিন থেকে চার বার মুখ পরিষ্কার করুন।
২.আধা কাপ উষ্ণ গরম পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন।
৩. একটি কাটন বলে মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া লাগিয়ে মুখের ঘায়ে লাগাতে পারেন দিনে তিন থেকে চারবার।
৪. যদি আপনার মুখের খুলে যায় তাহলে আলতোভাবে ঘষুন এবং যদি টানটান করে তাহলে লবণ-পানি দিয়ে গরগর করুন।
৫. মুখের ঘা শুকাতে ফিটকিরি পাউডার ভালো কাজ করে। একটি সরাসরি মুখের মধ্যে এক মিনিট রেখে দিন একটি ছোট টুকরা সরাসরি মুখে লাগান এক মিনিট রেখেদিন তিক্ত হলেও কষ্ট করে ধরে রাখুন ফেলবেন না । ৬০ সেকেন্ড পরে বের করে ফেলুন তবে মুখ ধুয়ে ফেলবেন না, কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যথা কমে যাবে। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যথা না যায়, তাহলে প্রক্রিয়াটি আবার অনুসরণ করুন।

প্রতিরোধে করণীয়ঃ
১. মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। পান , সুপারি , জর্দা , গুল, ‌তামাক পাতা , মাদক , অ্যালকোহল , অতিরিক্ত চা-কফি বর্জনীয়।
২. আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খেতে হবে ।
৩.পেটের যে কোনো অসুখ হলে তার চিকিৎসা জরুরি।
৪. পানিশূন্যতা , অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও দাঁতের ক্যারিজ জাতীয় অসুখ থাকলে তা দ্রুত সমাধান জরুরি।
৫. মাউথ ওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। অথবা হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে কুলি করা দরকার।
৬. কষ্ট বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

– ডাক্তার শারমিন জাহান
ওরাল এন্ড ডেন্টাল সার্জন
ফরাজী ডেন্টাল হসপিটাল এন্ড রিসার্চ সেন্টার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে