রোজায় কেমন হবে খাদ্যাভ্যাস

0
339

রমজানে কি খাব? কি খাব না? প্রথমেই এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আমি একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ায় আমাকে অনেক হৃদরোগীকে খাদ্যোপদেশ দিতে হয় এবং এসব রোগীর মধ্যে অনেকে আবার উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাই সব কিছু বিবেচনা করে তাদের খাদ্যোপদেশ প্রদান করতে হয়। অনেকের প্রশ্ন থাকে ইফতারিতে ছোলা, বেগুনি, পিঁয়াজু, বড়া, পাকোড়া, জিলাপি ইত্যাদি খেতে পারব কিনা? উপরোক্ত খাদ্যবস্তুগুলো আমাদের বাঙালি মুসলিম সামাজিকতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এ ধরনের খাদ্যবস্তু হৃদরোগীদের জন্য কিছুটা ক্ষতিকর হলেও একেবারে বন্ধ করা সমীচীন হবে না।

তবে হৃদরোগীদের তেলে ভাজা খাদ্যবস্তু যতটা সম্ভব কম পরিমাণে গ্রহণ করে শাকসবজি যেমন তরমুজ, ক্ষিরা, শশা, টমেটো, আপেল, কমলা, নাশপাতি, পিয়ারা, বড়ই, আমড়া, বেল, লিচু ও কম পরিমাণে আম, কাঁঠাল গ্রহণ করে খাদ্যকে সুষম রাখতে হবে। রোজার মাসে দই, মিষ্টি, পায়েস, ফিরনি, নুডলস, সেমাই, তেহারি, বিরিয়ানি, ভুনা খিচুড়ি, কোরমা, রেজালা, রোস্ট, পোলাও ইত্যাদি খাদ্য আমাদের সমাজে খুবই প্রচলিত খাদ্য। এ ধরনের খাদ্য গ্রহণ না করলে রোগীর মনোকষ্ট বাড়ে যা হৃদরোগের জন্য ক্ষতিকারক আর এসব খাদ্যবস্তু বেশি পরিমাণে গ্রহণের ফলে হৃদরোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে হৃদরোগ আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তবে এ ধরনের খাদ্য একবারে বর্জন করাও যেহেতু সম্ভব নয়, তাই প্রতিদিন উল্লিখিত খাবারের মাঝ থেকে একটি অথবা দুটি আইটেমের বেশি কোনোক্রমেই গ্রহণ করা যাবে না এবং তার পরিমাণও স্বাভাবিকের চেয়ে একটু কম পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। ইফতারে একদিন ছোলা ও পেঁয়াজু খেলে অন্য আইটেম যেমন বেগুনি, বড়া, জিলাপি, পাকোড়ার মতো অন্য আইটেম খাওয়া ঠিক হবে না এবং রাতের খাবারে একটি বিরিয়ানি খেলে ওইদিন দই, মিষ্টি, রোস্ট, রেজালা, কোরমা ইত্যাদি খাওয়া যাবে না মোট কথা আপনার খাদ্য গ্রহণের একটা ভারসাম্য রক্ষা করে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, তা না হলে আপনার খাদ্য গ্রহণ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে এবং আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

গ্রামবাংলায় একটা সাধারণ কথা প্রচলিত আছে, আপনি যতটুকু হজম করতে পারবেন ঠিক ততটুকুই খাবেন, তার চেয়ে বেশি নয়। এ কথাটাকেই বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে বলতে গেলে এমনভাবে বলতে হবে যে আপনার দৈনিক যতটুকু এনার্জি বা শক্তি বা ক্যালরির প্রয়োজন আপনি যদি ততটুকুই গ্রহণ করেন তবে কি খাদ্যবস্তু খেলেন তা নিয়ে ততটা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো দরকার নেই কারণ আপনার শারীরিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করায় খাদ্যের পুরা অংশই আপনার শারীরিক প্রয়োজনে খরচ হয়ে যাচ্ছে। তাই এসব খাদ্যবস্তুর নির্যাস আপনার শরীরে জমা হয়ে থাকার কোনো অবকাশ নেই এবং এসব খাদ্যবস্তুর নির্যাস জমা হয়ে আপনার শারীরিক ক্ষতি সাধিত হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই মনে রাখতে হবে, কি বস্তু দিয়ে আপনি আহার সম্পন্ন করলেন তা বড় কথা নয়, তার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো আপনি কতটুকু পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করলেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে কোনো ধরনের খাদ্য গ্রহণ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বিপদের কারণ। আর আপনার খাদ্য গ্রহণের মাত্রা পরিমিত হচ্ছে কিনা তা বোঝার সঠিক পন্থা হলো, আপনার শারীরিক ওজন একই পরিমাণ আছে কিনা? ওজন বৃদ্ধি পেলে বুঝতে হবে আপনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করছেন এবং ওজন কমতে থাকলে বুঝতে হবে যে আপনি আপনার শারীরিক প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করছেন। তাই সপ্তাহে অন্তত একবার আপনার শারীরিক ওজন পরিমাপ করুন।

লেখক: হার্ট স্পেশালিস্ট
পরিচালক ও চিফ কনসালটেন্ট
শমশের হার্ট কেয়ার
মিরপুর রোড, শ্যামলী, ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে