সব শিশু একরকম হয় না। কোনও কোনও শিশু অনেক বেশি আবেগপ্রবণ। অন্য যে কোনও আবেগের মতো তাদের রাগও খুব বেশি বা রাগের বহিঃপ্রকাশ অনেক বেশি। বেশিরভাগ শিশুই রাগ হলে চিৎকার করে কাঁদে, নিজের দাবি আদায়ের চেষ্টা করে। এটা খুব একটা গুরুতর বিষয় নয়। কিন্তু শিশু যদি রেগে গিয়ে জিনিসপত্র ছোঁড়াছুড়ি শুরু করে, বাড়ির বড়দের মারধোর করে কিংবা নিজেকে আঘাত করে তখন সেটা শুধু রাগ নয় ‘ব্যাড টেম্পার’হয়ে দাঁড়ায়। শিশু যদি ঘন ঘন সামান্য কারণে বা বারবার এরকম করতে থাকে, তাহলে কিন্তু সতর্ক হওয়া দরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের রাগের একটা প্রধান কারণ ওরা যা চাইছে সেটা পাচ্ছে না। অনেকসময় বেশ কিছু অন্যায় দাবিও থাকে। যেমন- টিভিতে কোনও অনুষ্ঠান দেখার জন্য সন্তান একটা বায়না জুড়ে দিল। কিংবা বাইরে গিয়ে পছন্দের কোনও কিছু কিনে দেওয়ার জন্য জেদ করতে শুরু করল। না দিলেই চিল চিৎকার। এরকম ক্ষেত্রে তখনই যদি সেটা কিনে দেন তাহলে শিশুর জেদ কিন্তু ক্রমশই বাড়তে থাকবে। তাই প্রথমে শান্ত হয়ে সংযতভাবে বোঝান। এতেও কাজ না হলে ওকে চিৎকার করতে দিন। সন্তান রেগে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙা বা ছোঁড়াছুড়ি করার অভ্যেস থাকলে তার হাতের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে রাখুন। এই সময়ে ওকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এতে কিছুক্ষণ ও বুঝতে পারবে রাগ করে কোনও সমাধান হবে না।
সন্তান যখন রেগে যাবে তখন আপনিও রেগে ওর সঙ্গে তর্ক করতে বা মারধোর করতে শুরু করে দেবেন না। এতে তার রাগ আরও বেড়ে যাবে। বরং গম্ভীরভাবে চুপ করে থাকুন। হাবেভাবে ওকে বোঝান ব্যাপারটা আপনার পছন্দ হচ্ছে না। এই সময়ে কিছু বোঝানোর দরকার নেই। বরং তাকে বলুন, আগে তুমি শান্ত হও তারপর এই ব্যাপারে কথা বলব। সন্তান একটু শান্ত হলে ওকে যুক্তি দিয়ে বোঝান কেন তার দাবি আপনি মেনে নেননি। শিশুকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বললে অনেকটাই কাজ হবে। বোঝানোর সময় শান্ত এবং সংযত থাকুন। মনে রাখবেন বড়রা যতটা যুক্তি দিয়ে জিনিস বুঝতে পারে ছোটরা কিন্তু অত সহজে বুঝবে না। তাছাড়া কোনও বিষয় আপনার কাছে হয়তো খুবই তুচ্ছ, কিন্তু শিশুর কাছে সেটাই হয়তো অনেক বড় ব্যাপার। এই বিষয়গুলো একটু সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে হবে। তার যুক্তিগুলো মন দিয়ে শুনুন। সন্তানকে বোঝার চেষ্টা করুন। সে যদি দেখে আপনার কাছে তার কথার যথেষ্ট গুরুত্ব আছে তাহলে সমস্যা অনেকটাই কমবে।
সন্তান যখন ভাল মুডে থাকবে তখন ওকে গল্প করে বোঝান অত্যাধিক রাগ এক ধরনের খারাপ অভ্যাস। নানারকম গল্প বলে তাকে রাগের খারাপ দিকগুলি ওকে বুঝিয়ে দিন। রাগের বশে কোনও ভুল করেছেন এই ধরনের ঘটনা বা অভিজ্ঞতাও শেয়ার করতে পারেন। এতে ভাল কাজ দেবে।
শিশু যদি অত্যাধিক রাগী হয় তাহলে সেখানে পরিবারে ভূমিকাও অনেকটা। প্রথমেই দেখতে হবে বাড়ির কারও রাগের মাথায় চিৎকার করা বা জিনিসপত্র ভাঙার অভ্যেস আছে কি না। যদি তাই হয় তাহলে প্রথমে নিজেদের শোধরানো দরকার। শিশুরা অনুকরণপ্রিয় হয়। তারা যা দেখে তাই শেখে। তাই সন্তানের বাবা মা হিসেবে আপনাদেরও এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।