বাংলাদেশে ক্রমে শীতকালের আমেজ শুরু হয়েছে। শীতকাল মানেই নানা রোগব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা এই সময় নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন গরম কাপড় পরিধান করা। শীতকালে সাধারণত নাক, কান ও গলায় যেসব সমস্যা হতে পারে তা হলো-
টনসিলের প্রদাহ বা গলাব্যথা : শীতকালে নারী-পুরুষ (হোক ছোট বা বড়) উভয়েরই গলাব্যথা হয়ে টনসিলে তীব্র প্রদাহ হতে পারে। এজন্য গলাব্যথা, জ্বর ও ঢোক গিলতে অসুবিধা হতে পারে। সমস্যাটি যদি ভাইরাসজনিত হয়, তা হলে লবণপানি দিয়ে গড়গড়া করলে ও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেলে ভালো হয়ে যায়। আর যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত টনসিল প্রদাহ হয়, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণমতো সঠিক সময় ও সঠিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করতে হবে। অনেক সময় ঠাণ্ডা লেগে কণ্ঠনালিতে ইনফেকশন বা গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টামিন ও মেনথলের ভাপ নেওয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লেগে গিয়ে শিশুর শ্বাসনালিতে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে, এমনকি নিউমোনিয়াও হয়ে যেতে পারে। তাই শিশুর খুব বেশি ঠাণ্ডা লেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এডিনয়েড : শিশুদের নাকের পেছনে এক ধরনের টনসিল থাকে, যাকে বলা হয়ে থাকে এডিনয়েড। এটি বড় হয়ে গেলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। তাই রাতে শিশুরা মুখ হাঁ করে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। এডিনয়েড অনেক বড় হয়ে গেলে শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং রাতে ঘুমের সময় নাক ডাকতে থাকে। এ কারণে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। এডিনয়েডের কারণে শিশুর মধ্যকর্ণে পানি জমে যেতে পারে। তখন শিশুরা কম শুনতে পায়। ফলে দেখা যায়, শিশুরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে এবং রেডিও-টেলিভিশনের ভলিউম বাড়িয়ে দেয়। এ ধরনের সমস্যা হলে নাক, কান ও গলাবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অ্যালার্জিজনিত নাকের সর্দি ও পলিপ : কোনো ধরনের অ্যালার্জেন, যেমন- ধুলাবালি, গাড়ির ধোঁয়া নাকে ঢুকে যায়, তা হলে নাকে অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ হতে পারে। এতে নাকে হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে। বিভিন্ন ওষুধের মাধ্যমে এবং যে কারণে নাকে সর্দি ও অ্যালার্জি হয়, তা থেকে দূরে থাকলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সাধারণত দীর্ঘদিন নাকে অ্যালার্জি থাকলে পলিপ হতে পারে। পলিপ দেখতে আঙুর ফলের মতো দেখায়। নাকের পলিপে নাক বন্ধ হয়ে যায়; সাইনাসের ইনফেকশন হয়ে মাথাব্যথা হতে পারে।
চিকিৎসা : এ রোগের চিকিৎসা হলো অপারেশন। প্রচলিত নিয়মে অপারেশনে আবার পলিপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আধুনিক এন্ডোস্কপিক সাইনাস সার্জারির মাধ্যমে সফলভাবে অপারেশন করা যায়। বর্তমানে আমাদের দেশে বড় বড় হাসপাতালে এন্ডোস্কপিক সাইনাস সার্জারি নিয়মিত হয়েছে। শীতকালে প্রচুর পুষ্টিকর শাকসবজি, ফলমূল পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। নিয়মিত শাকসবজি ও ফলমূল খেলে রোগব্যাধিও কম হবে।
লেখক :
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল