সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশ আইন করার নির্দেশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভ্যাকসিন নিলেও হাত ধোয়া ও মাস্ক পরা চালিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলোকে আগামী জুনের মধ্যে আইনে পরিণত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন। এ সময় ৪০ বছর বয়সীদের টিকার আওতায় আনার নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান। এ ছাড়া টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও সহজ করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিপরিষদের সংশ্লিষ্ট সদস্যবৃন্দ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষ থেকে ভার্চুয়ালি এ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা সাংবাদিকদের জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া অব্যাহত রাখতে হবে। অর্থাৎ টিকা যারা নিয়েছে তাদেরও। এটা মনে করলে হবে না যে, আমি টিকা নিয়েছি তাই একদম নিরাপদ। সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী টিকা প্রদানকে আরও একটু সহজীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এখন আমার মনে হয় একটু ওপেন করে দিয়ে তাড়াতাড়ি যত দেওয়া যেতে পারে। কারণ একবার দিয়ে আবার পরবর্তী ডোজের জন্য তৈরি হতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, একটা আইডি কার্ডের মতো থাকতে হবে, কারা করোনা ভ্যাকসিনটা নিল। এটা দেখিয়ে দ্বিতীয় ডোজটা নিতে হবে এবং সেই আইডেনটিটিটা তাদের কাছে থেকে যাবে। তাহলে কেউ বিদেশে গেলে তারা যে করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছে তার প্রমাণটা থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা নেওয়ার বিষয়ে গ্রামাঞ্চলে মানুষের মাঝে এখনো একটু দ্বিধা থাকলেও তা চলে যাবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, করোনা টিকার সেকেন্ড ডোজের জন্য ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। লন্ডনে সেভাবেই করা হচ্ছে। এ জন্য ১৫ দিনের মধ্যে সেকেন্ড ডোজের টিকা যে নিতে হবে তা নয়। অন্তত তিন মাস পর্যন্ত এ কার্যকারিতা থাকে, সেকেন্ড ডোজ নেওয়া যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাচ্ছি দ্রুতই সেকেন্ড ডোজটা দিয়ে দেওয়ার। আমি বলেছি এক মাস বা দুই মাসের মধ্যে সেকেন্ড ডোজ দিয়ে এগুলো শেষ করার। কারণ ভ্যাকসিনের যেন ডেট পেরিয়ে না যায় সেটাও দেখতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্ন বাহিনী এবং পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য টিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিয়ে এসে তাদের দ্রুত টিকা দিয়ে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ফ্রন্টলাইনার তাদের আগে দিতে হবে। এর মধ্যে চিকিৎসক বা চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অন্য বাহিনীগুলো এবং যারা এই কভিড মোকাবিলায় সক্রিয় ছিল তাদের আগে দিচ্ছি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত ব্যতীত ৫৫ বছরের নিচের কোনো সাধারণ নাগরিক টিকা নিতে নিবন্ধন করতে পারতেন না। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন ৪০ বছর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। কেউ যদি রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যর্থ হন, তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিতে পারবেন, সেই ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে চেক করা হবে তিনি কেন রেজিস্ট্রেশন করেননি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একটা উল্লেখযোগ্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০১৩ সালে রুলিং দেওয়া হলো হাই কোর্ট থেকে যে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট থেকে আটাত্তর পর্যন্ত এবং বিরাশি থেকে ছিয়াশির সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে অর্ডিন্যান্সগুলো (অধ্যাদেশ) করা হয়েছিল সেগুলো বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইন করতে হবে। আর যেগুলোর প্রয়োজন নেই সেগুলো ড্রপ করে দিতে হবে। ‘এগুলোর কয়েকশ’ আইন ছিল সেগুলো সব হয়ে গেছে। এখন ৫৯টি আইন বাকি আছে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় অনুযায়ী লিস্ট করে দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কেবিনেট থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে আগামী জুনের মধ্যে অবশ্যই এগুলো আইনে পরিণত করবে। এ জন্য কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। অনেক নতুন সচিব আসছেন তারা হয়তো জানেন না। তাদের নিয়ে আমরা আগামী ২০ জানুয়ারি বসে গাইডলাইন দিয়ে দেব, যাতে আগামী জুনের মধ্যে এগুলো সংসদে পাঠানোর মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
শিশু কেন্দ্র আসবে এক ছাতার নিচে : গতকালের মন্ত্রিসভায় ‘শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র আইন, ২০২১’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। দিবাযতœ কেন্দ্র করতে হলে নির্ধারিত শিশু বা ক্ষেত্রমতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর প্রয়োজনীয় সেবা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, নিরাপত্তা, চিকিৎসা, বিনোদন, শিক্ষা ও শিশুর জন্য অনুকূল পরিবেশ এবং প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, ‘শিশু কেন্দ্র থেকে কোনো শিশু হারিয়ে গেলে ১০ বছর জেলের পাশাপাশি ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। নতুন আইন পাস হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে চলমান শিশু দিবাযতœ কেন্দ্রগুলোকে নিবন্ধন নিতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তখন সব শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে আসবে। নতুন আইন পাস হওয়ার পর শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা করবে, সেখানে সব বিষয় বিস্তারিত বলে দেওয়া হবে। বর্তমানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১১৯টি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০টি শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র রয়েছে।
কিটোপ্রোফেন নিষিদ্ধ হচ্ছে, রক্ষা পাবে শকুন : দেশে মহাবিপন্ন প্রাণী শকুন রক্ষায় গবাদিপশুর জন্য তৈরি কিটোপ্রোফেন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সত্তরের দিকে দেশে ৫০ হাজারের মতো শকুন ছিল, এখন আছে মাত্র ২৬০টি। এর অন্যতম কারণ হলো পশুর শরীরে কিটোপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ব্যবহার হয়। পশু মারা যাওয়ার পর সেই পশু শকুন খায়। তখন শকুন মারা যায়। পচা, দুর্গন্ধযুক্ত অনেক কিছু খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শকুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কিটোপ্রোফেনের বিকল্প অনেক ভালো ওষুধ বাজারে আছে। যেগুলো শকুনের জন্য ক্ষতিকারক নয়। তাই এটি নিষিদ্ধ করলেও সমস্যা হবে না।