করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেনসংকটে ছয়জন করোনা রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট হয়। রাত ৮টার মধ্যে শ্বাসকষ্টে ছয় রোগীর মৃত্যু হয়।
অক্সিজেনসংকটে যারা মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তাদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন- আশাশুনির আব্দুল হামিদ (৭৫), কালীগঞ্জের আকরাম হোসেন (৩৭) ও শহরতলির ইটাগাছার খায়রুন নেছা (৪০)।
হাসপাতালের বারান্দায় অবস্থান করা রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালে অক্সিজেনসংকটের কথা জানতে পেরে তাঁরা হাসপাতালে ছুটে এসেছেন।
অক্সিজেনসংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত ই খোদা সাংবাদিকদের জানান, বিকেলে হঠাৎ করে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের প্রেসার কমে যায়। সন্ধ্যা ৭টার পর অক্সিজেনের গাড়ি এসে পৌঁছে। এখন সব কিছু ঠিকঠাক চলছে। রাতে অক্সিজেন প্লান্টে নতুন করে ১৪ হাজার লিটার অক্সিজেন ঢোকানো হয়েছে। এখন অক্সিজেন মজুদ রয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু হয়েছে কি না জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, মৃত্যুর বিষয়টি জানা নেই। প্রতিদিন সকাল ৮টার পর মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করা হয়। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ৮টার পর মৃত্যুর হালনাগাদ তথ্য জানানো হবে।
সাতক্ষীরা শহরতলির কুকরালী গ্রামের আব্দুল হাসিব জানান, খায়রুন নেছা তাঁর প্রতিবেশী। করোনায় আক্রান্ত এই নারী সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। অক্সিজেনসংকটে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর চাচি নাজমা খাতুন (৪৮) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হন। মাগরিবের আজানের পর থেকে আইসিইউতে অক্সিজেনের সংকট শুরু হয়।
হাসিব জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রতিটি করোনা রোগীর প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল। অক্সিজেনের অভাবে এক ঘণ্টা ১৫ মিনিটের মধ্যে তাঁর সামনে ছয়জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। প্রত্যক্ষদর্শী কলারোয়ার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার গোলাম মোস্তফা জানান, তাঁর স্ত্রী করোনা উপসর্গ নিয়ে ওই হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি আছেন। তাঁর সামনে অক্সিজেনসংকটে দুজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরো জানান, হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা অক্সিজেন সরবরাহ না থাকার কথা বলাবলি করলে রোগীর স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বিষয়টি সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্যকে অবহিত করেন বলে গোলাম মোস্তফা জানান।
অক্সিজেনসংকটে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরে রাত ৮টার দিকে সাংবাদিকরা হাসপাতালের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।