প্রতারিত হচ্ছেন রোগীরা। সঙ্গে আছে আর্থিক ক্ষতি
অনুমোদন নেই স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবেশ অধিদফতরের। উপস্থিত থাকেন না চিকিৎসক। নেই ডিপ্লোমাধারী কোনো নার্স, চলছে অকেজো মেশিন দিয়ে নোংরা পরিবেশে রোগ নির্ণয়। মজুদ আছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। এতসব অনিয়ম-অভিযোগের ওপর ভর করেই চলছে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলো। ফলে প্রতারিত হচ্ছেন ভুক্তভোগী রোগীরা। সঙ্গে আছে আর্থিক ক্ষতি। তবে এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলেও এর প্রতিকার পাওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠানগুলো অনিয়মের ওপর ভর করে পরিচালনা করে আসছে। গত বুধবার রাতে এমন অনিয়মের কারণে নগরের সিটি হেলথ ক্লিনিককে সিলগালা করেছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। একই সঙ্গে ক্লিনিকের দুই কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। তাছাড়া একে খান এলাকার বেসরকারি আল-আমিন হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে এক্সরে পরীক্ষার রুমে অব্যবস্থাপনা ও ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অকেজো হওয়ায় রোগ নির্ণয় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মতে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত সরেজমিন পরিদর্শন এবং অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। পরিদর্শনকালে অনিয়ম দেখা গেলে জরিমানা ও সিলগালা করা হচ্ছে। গত এক মাসে অন্তত ৩০টির মতো হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। গত বৃহস্পতিবারও কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে জরিমানা করা হয়।’
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতর দেশের অনুমোদনহীন হাসপাতাল বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। এরপর গত ৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার সিভিল সার্জনদের সঙ্গে জরুরি বিশেষ মিটিংয়ে অবৈধ/অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক সমূহের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সিভিল সার্জন কার্যালয় পরিদর্শন শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যাথলজি পরিদর্শনকালে পতেঙ্গার মাইলের মাথা এলাকার নিউ চাঁদের আলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নানা অনিয়মের কারণে ল্যাবের নিচ তলার কয়েকটি রুম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অভিযোগ আছে, লাইসেন্স নবায়ন না করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, নিয়ম বহির্ভূতভাবে শয্যা রাখা, কিছু প্রতিষ্ঠানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সের নিয়োগপত্র না থাকা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তালিকা না থাকা, ক্লিনার নিয়োগের তথ্য না থাকা, রোগ নির্ণয়ের মূল্য তালিকা দৃশ্যমান করে না রাখা, রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক-প্যাথলজিস্টের কোনো তথ্য না থাকা, মেডিকেল টেকনোলজিস্টের তথ্য না থাকা, হাসপাতালে কোনো ব্লাড ব্যাংক না থাকা এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য না থাকাসহ নানা অনিয়ম আছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নান্দনিক চাকচিক্যে ভরা অভিজাত ‘তারকা হোটেল’ আদলে তৈরি হাসপাতালগুলোতে চলে রোগী ঠকানোর অসম প্রতিযোগিতা। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে রোগীদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি, সেবা ফি, সার্ভিস ফিসহ নানা নামে গলা কাটা অর্থ আদায় করা, প্রত্যাশিত সেবা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হওয়া, সরকারি হাসপাতালের সমস্যা-সংকট এবং নানা অব্যবস্থাপনাকে পুঁজি করে একশ্রেণির অসাধু চিকিৎসা ব্যবসায়ীর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো নীতিমালা অনুসরণ না করার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে অভিযোগ করার কর্তৃপক্ষ থাকলেও এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগে মোট ৪৩৯টি বেসরকারি হাসপাতাল আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলায় হাসপাতাল আছে ১৪৪টি ও রোগ নিরূপণী কেন্দ্র আছে ১৭৩টি, কক্সবাজারে হাসপাতাল ও রোগ নিরূপণী কেন্দ্র আছে ৮৯টি, খাগড়াছড়িতে আছে ৩৯টি, লক্ষ্মীপুরে আছে ৭৭টি, নোয়াখালীতে আছে ৭২টি ও রাঙামাটিতে আছে ১৮টি। তবে অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো তালিকা নেই। রাজনৈতিক এবং স্থানীয় নানা সমীকরণে অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা তৈরি করা হয় না বলেও অভিযোগ আছে।