অপারেশন করতে এসে ২০ শতাংশের বেশি রোগী সংক্রমণের শিকার

0
942
Spread the love

অপারেশন করতে এসে নানা ধরনের সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। ফলে অস্ত্রোপচার কক্ষে থাকা জীবাণু সংক্রমণের কারণে রোগীকে হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি অবস্থান করতে হয় এবং রোগী বাড়তি অর্থ খরচে বাধ্য হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগগুলোর চিকিৎসক এম নুর ই এলাহীর সাথে আরো ৯ জনচিকিৎসক ৪৯৬ জন রোগীর মধ্যে একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখান যে, এর মধ্যে ২০ শতাংশ রোগী অস্ত্রোপচারজনিত সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। এদের ৪৩ শতাংশ ই-কোলাই, ৩৩ শতাংশ স্টেফাইলোকোক্কাস অরিয়াস, ১১ শতাংশ সিউডোমোনাস এরোজিনোসার মতো জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন।
করোনা সংক্রমণের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে হার্নিয়া অপারেশন করতে এসে নরসিংদীর শাহানা আক্তারকে (৬৫) ৩৫ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। তাকে চিকিৎসকরা জানিয়ে ছিলেন, খুব বেশি হলে এক সপ্তাহ থাকতে হবে। কিন্তু শাহানা আক্তারকে টানা ৩৫ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। তাকে চিকিৎসকরা তিনবার অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান নতুন করে কাটাকাটি করতে। ব্লাড কালচার করতে হয় বেশ কয়েকবার। যে টাকা নিয়ে তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন তা থেকে ১০ গুণ বেশি টাকা খরচ হয়

শাহানা আক্তারের। কী হয়েছে, কেন সুস্থ হলেন না এ ব্যাপারে শাহানা আক্তারকে অথবা তার অভিভাবককে জানতে চাইলেও কিছুই জানানো হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের সাবেক ডিন ও সার্জিক্যাল অনকোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, অস্ত্রোপচার করতে এসে নানা কারণে রোগীরা নতুন করে জীবাণু সংক্রমণের শিকার হয়ে থাকেন। কিছু জীবাণু অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকেই রোগীরা পেয়ে থাকেন। অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম অবশ্য ভিন্নভাবে বিষয়টি দেখেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে প্রাপ্ত সংক্রমণের পরিমাণ খুব বেশি নয়। বেশি জীবাণু সংক্রমণ হয়ে থাকে অন্য কারণে। এগুলোর অন্যতম হলো রোগী দেখে চিকিৎসকরা তাদের হাত যথাযথভাবে পরিষ্কার করেন না।
অসচেতনতার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারটিতে নজরও দেন না। তিনি বলেন, এটি করতে গেলে কিছু অবকাঠামোর প্রয়োজন হয় তা নেই হাসপাতালগুলোতে, এর সাথে বাড়তি খরচেরও প্রশ্ন আছে। এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের রোগী হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ভর্তি থাকলেও রোগীর দেহে হাসপাতাল থেকে কিছু জীবাণু প্রবেশ করে। এসব জীবাণুর অনেকগুলো ওষুধ প্রতিরোধী (ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট) ধরনের হয়ে থাকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকারি কিংবা বেসরকারি বেশির ভাগ হাসপাতালেই মানসম্মত জীবাণু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা (স্ট্যান্ডার্ড ইনফেকশন কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট) নেই। খরচ বাড়ার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারটিতে দৃষ্টি দেন না।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সার্জিক্যাল সাইট ইনফেকশন বিশ^ব্যাপী একটা স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়ে গেছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশে এ প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে এবং দিন দিন এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ন্যাচারাল অ্যান্ড সোস্যাল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত ‘প্রিভেলেন্স সার্জারি সাইট ইনফেকশন ইন টার্শিয়ারি হাসপিটাল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় হুমায়ুন কবির শিকদার বলেন, বিশে^ প্রতি বছর ২৩ কোটি ৪০ লাখ অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে। এর মধ্যে ২.৫ থেকে ৪১.৯ শতাংশ অস্ত্রোপচারের রোগী জীবাণু সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। তিনি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, নাইজেরিয়াতে এসএসআই ৪১.৫ শতাংশ, সৌদি আরবে ২.৫৫ শতাংশ, ভারতে জেনারেল অ্যান্ড অর্থোপেডিক সার্জারির সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন ২০ শতাংশ।

উল্লেখ্য, অস্ত্রোপচারের তালিকায় উঠতে একজন রোগীকে বাংলাদেশে গড়ে ৩০ দিন হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়। অধ্যাপক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, রোগীদের হাসপাতালে অবস্থান কমিয়ে আনতে পারলে এবং অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন যথাযথ অনুসরণ করতে পারলে সংক্রমণের পরিমাণ কমে যাবে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে