করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কী কী বিশেষ ওষুধ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে গতকাল সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন। প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞের বরাতে বলা হয়েছে, এই গ্রহে ট্রাম্প সম্ভবত একমাত্র করোনা রোগী, যিনি এমন ওষুধ পেয়েছেন।
অনেকটা নাটকীয়ভাবে সোমবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প হাসপাতাল থেকে হোয়াইট হাউসে ফিরে যান। হাসপাতালে ভর্তির মাত্র তিন দিন পর তিনি হোয়াইট হাউসে ফেরেন। তিনি দ্রুত নির্বাচনী প্রচারে নামবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।
করোনা রোগী ট্রাম্পের এত দ্রুত হাসপাতাল ছাড়া নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা আছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ কোনো নাগরিক করোনায় সংক্রমিত হলে তিনি নিশ্চয়ই দেশটির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো একই চিকিৎসা পাওয়ার আশা করবেন না।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে অতিরিক্ত মনোযোগের পাশাপাশি ট্রাম্পের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সেবা পাওয়ারই কথা। কিন্তু তিনি যে চিকিৎসা পেয়েছেন বা পাচ্ছেন, তার মধ্যে কিছু এখন পর্যন্ত দেশটির সাধারণ লোকজনের জন্য সহজলভ্য করা হয়নি।
হাসপাতাল ত্যাগের আগে ট্রাম্প মার্কিন জনগণের উদ্দেশে দেওয়া টুইটে করোনা নিয়ে ভীত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, করোনা নিয়ে ভীত হবেন না। একই সঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ২০ বছর আগের চেয়েও ভালো বোধ করছেন।
ট্রাম্প যে ওষুধ, যে চিকিৎসা পেয়েছেন বা পাচ্ছেন, তা এখন পর্যন্ত সাধারণ মার্কিন নাগরিকেরা পাননি। তাই করোনা নিয়ে ভীত না হওয়ার যে আহ্বান ট্রাম্প তাঁর দেশের জনগণের প্রতি জানিয়েছেন, তাতে তাঁদের নিশ্চিন্তে থাকার উপায় নেই।
হাসপাতালে ভর্তির আগে ট্রাম্পকে রেজেনেরন ফার্মাসিউটিক্যালের একটি পরীক্ষামূলক অ্যান্টিবডি থেরাপি দেওয়া হয়। এটি করোনাভাইরাসের মাত্রা কমাতে পারে। তা ছাড়া ট্রায়ালে এই থেরাপির ইতিবাচক ফল দেখা গেছে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এখন পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে এই থেরাপি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি।
কোম্পানিটির ভাষ্য, ট্রাম্পের চিকিৎসকদের কাছ থেকে বিশেষ পরিস্থিতে ব্যবহারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই ওষুধ সরবরাহ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিক জানিয়েছে, অধিকাংশ মানুষের এই ওষুধ এভাবে পাওয়ার সুযোগ নেই। এটি পাওয়ার বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি ও চ্যালেঞ্জিং প্রক্রিয়া।
কিন্তু ট্রাম্প অ্যান্টিবডি থেরাপিটি পেয়েছেন। করোনা শনাক্ত হওয়ার পরদিনই তাঁকে তা দেওয়া হয়। হোয়াইট হাউস ও ট্রাম্পের চিকিৎসকেরা এই তথ্য জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. সীমা ইয়াসমিন উল্লেখ বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অসুস্থতার ব্যাপার। এ জন্য তা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে ২ লাখ ১০ হাজার আমেরিকান করোনায় মারা গেছেন। তাঁরা এই ধরনের চিকিৎসা বা ওষুধ পাননি। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো হাজার হাজার আমেরিকান চিকিৎসাধীন। তারাও এই চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
ট্রাম্পকে অ্যান্টিবডি থেরাপির পাশাপাশি রেমডেসিভির ও ডেক্সামেথাসোনও দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এই তিনটি ওষুধের ব্যবহার প্রসঙ্গে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের অধ্যাপক জনাথন রেইনার বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) সম্ভবত এই গ্রহের একমাত্র রোগী, যিনি এই বিশেষ ওষুধগুলোর মিশ্রণটি পেয়েছেন।’
সূত্রঃ প্রথম আলো