এসকন সম্মেলন ২০২৩; মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া রোগীদের জন্য দেশে পর্যাপ্ত সেবাকেন্দ্র নেই

0
261
Spread the love

দেশে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি বা মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া রোগীদের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই। দেশে পর্যাপ্ত সেবাকেন্দ্র না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ ধরনের রোগীরা। মেরুরজ্জুতে আঘাতের কারণে তাঁদের দীর্ঘ সময় ভুগতে হয়। এমনকি আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিবহনব্যবস্থাও নেই।

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ব্র্যাক সিডিএমে ২২তম এশিয়ান স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি নেটওয়ার্ক (এসকন) সম্মেলন ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট স্পাইনাল সার্জন ফজলুল হক এসব কথা বলেন।

এসকনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফজলুল হক আরও বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজে মেরুরজ্জুতে আঘাত পাওয়া রোগীদের আবাসনের সুযোগ নেই। সরকারি মেডিকেল ও অন্যান্য বিশেষায়িত হাসপাতালে তাঁদের কীভাবে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাবতে হবে।

সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) প্রতিষ্ঠাতা ও ২২তম এসকন সম্মেলনের সমন্বয়কারী ভ্যালেরি এ টেইলর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য মোহাম্মদ শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিবিএম গ্লোবাল ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মুহাম্মদ মুশফিকুল ওয়ারা, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রসের (আইসিআরসি) হেলথ কো-অর্ডিনেটর নাদিরা হায়াত বুরহানি, স্পাইনাল সার্জন ও এসকনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ফজলুল হক, সহপ্রতিষ্ঠাতা আপিছানা কোবিন্ধা, ট্রাস্ট ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশান অব দ্য প্যারালাইজডের (টিআরপি) ট্রাস্টি মুস্তাক আহমেদ, ২২তম এসকন সম্মেলনের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন।

ভ্যালেরি এ টেইলর বলেন, সম্মেলনে উপস্থিত প্রত্যেকেরই ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যাশা আছে। নিজেদের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদানের মাধ্যমে প্রত্যাশা পূরণের সুযোগ তৈরি হবে। একে-অপরের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন তৈরি হবে, যার মাধ্যমে এবারের সম্মেলন সফলতা পাবে।

মুস্তাক আহমেদ বলেন, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ দেশে ফিরে বাস্তবধর্মী পরিবর্তনে যখন কাজ করবেন, তখনই এ সম্মেলনের সফলতা আসবে। প্রতিনিয়ত বৈশ্বিক পরিবর্তন হচ্ছে, জনসংখ্যা বাড়ছে। এখন সমস্যা সমাধানে অন্যের ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। সম্মিলিতভাবে নিজেদেরই সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আজ বেশ কয়েকজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি ফুলের তোড়া দিয়ে তাঁদের বরণ করে নিয়েছেন। সিআরপির সহযোগিতা না পেলে তাঁরা শয্যাশায়ী জীবনযাপন করতেন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা সমাজের বাইরের কেউ নন। তাঁদের সহযোগিতা করতে হবে। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে একত্রে কাজ করতে হবে। এ ধরনের সম্মেলন জ্ঞানের আদান-প্রদান, অসুস্থদের সেবা দেওয়ার উন্নত উপায় সম্পর্কে জানার সুযোগ তৈরি করে দেবে। তিনটি বিষয়ের মাধ্যমে পক্ষাঘাত নিরাময় হতে পারে। ওই বিষয়ে প্রকৃত শিক্ষা, আর্থিক বা ফিজিওথেরাপির বিষয়ে সহযোগিতা ও মনস্তাত্ত্বিক সহযোগিতা।

‘জ্ঞানের বিনিময় ও বন্ধুত্বের গভীরতার মাধ্যমে মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া রোগীদের পরিষেবা শক্তিশালী করা’—প্রতিপাদ্যে এবারের এসকন সম্মেলনে ভারত, শ্রীলঙ্কা অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসসহ বিশ্বের ২০টির বেশি দেশের প্রতিনিধিসহ চার শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেন। সম্মেলনের প্রথম দিনে আজ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিশেজ্ঞরা মেরুরজ্জুর আঘাত নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

আগামীকাল রোববার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে একই জায়গায় মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া রোগীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে দিকনির্দেশনা নিয়ে ৯টি পর্বে আলোচনা করা হবে। এ ছাড়া সম্মেলনে উপস্থাপিত সবচেয়ে ভালো গবেষণা প্রতিবেদন ও গবেষককে পুরস্কার দেওয়া হবে। পরদিন সোমবার সাভারের সিআরপিতে একই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এসকন সম্মেলন ২০২৩ শেষ হবে।

সিআরপির আয়োজনে প্রথম আলোর সহযোগিতায় সম্মেলনের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে