দিনের শুরুতে বা কাজের মাঝে এক কাপ কফি শরীর এবং মনের চাঙ্গাভাব ফিরিয়ে আনে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় কাজ করেন, তারা শরীরে ফুরফুরে ভাব ফিরিয়ে আনার জন্য কফি পান করে থাকেন।
রেস্তোরাঁ থেকে বাড়ি, ভিন্ন স্বাদের ও নামের কফি এখন অনেকেই পছন্দ করেন। তবে কফি কী শুধু সুস্বাদু পানীয় হিসেবে কাজ করে, নাকি এটি আমাদের শরীরের জন্য কিছু সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে? এমনকি অবসাদ বা মাথাব্যথা কমাতে কতটা কার্যকরী, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে।
কফির উপকারিতা
কফির মধ্যে রয়েছে ক্যাফেইন। এটি একটি শক্তিশালী উদ্দীপক। ক্যাফেইন শরীরের শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে এবং মনকে চনমনে রাখে। সামান্য পরিমাণ কফি পানে মস্তিষ্কে ডোপামিনের ক্ষরণ বাড়ে। এর ফলে ভালো অনুভূতি সৃষ্টি হয় এবং মনোযোগও বৃদ্ধি পায়। এটি এক ধরনের ‘ফিল-গুড’ হরমোন হিসেবে কাজ করে। ফলে শরীর সতেজ হয় এবং অবসাদও কমে যায়। সেই সঙ্গে কফি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
অতিরিক্ত কফি পানে যা হতে পারে
কফির উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত পরিমাণে কফি পান শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি করে। যা উল্টো অবসাদ বাড়িয়ে তোলে। মস্তিষ্কে ক্যাফেইনের উচ্চ পরিমাণের প্রভাবেই এই সমস্যা দেখা দেয়।
অতিরিক্ত কফি পান করলে আমাদের শরীরে অনিদ্রা, অস্থিরতা এবং মাথাব্যথা বাড়তে পারে। এছাড়া হৃদপিণ্ডের অতিরিক্ত স্পন্দন এবং পেট খারাপের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অবসাদ কমানোর জন্য কফি কতটুকু উপকারী?
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাফেইন কেবল তখনই কার্যকরী, যখন এটি অল্প পরিমাণে খাওয়া হয়। স্ট্রেস বা উদ্বেগ কমানোর উদ্দেশ্যে কফি পান করলে এর পরিমাণ হতে হবে সঠিক। এক কাপ কফি অল্প পরিমাণে পান করলে এটি মনকে সজাগ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।
যদি একাধিক কাপ কফি পান করা হয়, তাহলে এর প্রভাব উল্টো হতে পারে। স্ট্রেসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মাথাব্যথাও শুরু হতে পারে। বিশেষ করে যখন আপনি কফি পান করছেন, তখন যদি পর্যাপ্ত পানি পান না করেন, তা শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কফির ক্ষতিকর প্রভাব এবং সতর্কতা
অতিরিক্ত কফি পানের ফলে শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ে। উচ্চ পরিমাণ ক্যাফেইন স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে মানুষের মানসিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে বেশি কফি পানে গ্যাস্ট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ এবং হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়া যদি আপনি নিয়মিত কফি পান করেন, তাহলে এটি আপনার শরীরের টেম্পারেচার নিয়ন্ত্রণেও সমস্যা তৈরি করতে পারে।
কফি যেহেতু একটি জনপ্রিয় পানীয়, তাই এটি পান করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অল্প পরিমাণে কফি পান করলে এটি আমাদের শরীর ও মনের জন্য উপকারী হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে কফি পান করা শরীরের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে। স্ট্রেস বা অবসাদ কমাতে কফি পান করতে চাইলে, তা সঠিক পরিমাণে পান করাই বুদ্ধিমানের কাজ।