করোনাভাইরাস: ফুসফুস রক্ষায় যা করণীয়

0
944
Spread the love

করোনার প্রথম ঢেউ থেকে দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। বিশেষ করে, নতুন ধরনের করোনায় তরুণরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

রোগীদের অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ায় আইসিইউ লাগছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ফুসফুসে ক্ষত তৈরি করছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের মূল আক্রমণ স্থলও ফুসফুস।

বাতাসের মাধ্যমে বা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে নাক বা মুখের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। কিছু দিনের মধ্যে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ জটিলতা।

এমনকি করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পাঁচ দিনের মধ্যে ৪৮ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হচ্ছে বলে সরকারি গবেষণা সংস্থা আইইডিসিআর তথ্য দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ফুসফুস ভালো রাখতে করণীয় কী এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ইনজিনিয়াস হেলথ কেয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান।

তিনি বলেন, যে সব কাজ ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত করে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা ভালো।

করোনায় আক্রান্ত রোগীর সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার দুটি ফুসফুসের ওপরই একটা সাদা কুয়াশার আস্তরণ তৈরি হয়েছে; যা দেখতে অনেকটা ভাঙা কাচের মতো। এটা ফুসফুসে আক্রমণের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য।

করোনাভাইরাসে গুরুতর আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে, এর ফলে প্রচুর শ্লেষ্মা, জলীয় পদার্থ এবং কোষ তৈরি হয়, যা ফুসফুসের বাতাস চলাচলের থলিগুলো বা অ্যালভিওলিকে ভর্তি করে ফেলে। এটা যখন হয়, তখন নিউমোনিয়া দেখা দেয়। ফলে সাহায্য ছাড়া মানুষের পক্ষে নিঃশ্বাস নেয়া সম্ভব হয় না। এটাকেই প্রাথমিক লক্ষণ বলা হয়।

এক্স রে করে যখন কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির পেরিফাইয়াড শ্যাডো আসে, তখন অন্তত এন্টিভাইরাল থেরাপি ওরাল ফর্মে দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়। যাতে ভাইরাসটি ফুসফুসের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

‘সে কারণে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি, করোনা উপসর্গ সর্দি কাশি দেখা দিলে অবশ্যই টেস্ট করাবেন। টেস্টে কারোনা ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা নেবেন।’

এক্স রে করে দেখে নিন আপনার ফুসফুসে ক্ষত হয়েছে কি না। যদি হয়ে থাকে, এন্টিভাইরাল থেরাপি দিতে হবে। যা আপনার জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘ফুসফুস যদি ৩০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আমরা সেই রোগীকে রেমডেসিভির ইনজেকশন দিয়ে থাকি। যাদের ফুসফুস ৫০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের অক্সিজেন দিতে হয় এবং ইনফরমেটিভ মেডিসিন ব্যবহার করতে হয়।

‘ইনফরমেটিভ অনেকগুলো মেডিসিন বাংলাদেশে পাওয়া যায়। সেগুলো থেকে আমরা রোগীকে রেফার করি। যদি ফুসফুসের ৮০ শতাংশ আক্রান্ত হয়ে যায়, তখন রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হয়। তাদের আইসিইউ সাপোর্টে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। অনেক সময় আইসিইউ সংকটের কারণে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।’

ভিটামিন সি ও ডি জাতীয় খাবার খান

তিনি বলেন, ফুসফুস ভালো রাখতে সি ও ডি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। শরীরের ইউমিনিটি বাড়ানোর জন্য ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার খাওয়া ভালো। দেশের মানুষের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খাওয়া যেতে পারে।

ব্যায়াম করুন

ফুসফুস সুস্থ রাখতে দিনের একটা নির্ধারিত সময় ব্যায়াম করতে হবে। সকাল ও সন্ধ্যায় এ ব্যায়াম করা যেতে পারে। যেহেতু এখন রমজান মাস ইফতার ও তারাবির পর ব্যায়াম করলে বেশি উপকার। এমন ব্যায়াম করতে হবে যাতে শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে আসে। সুস্থ থাকার জন্য অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। দিনের একটি নির্ধারিত সময় হাঁটতে হবে। ভোর বেলায় বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে। এই সময়ের বাতাস আপনার ফুসফুসের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন ধৈর্য ধরে হাঁটলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

জোর বাড়ানোর জন্য প্লাংক, সাইড প্লাংক ও পুশ আপ করতে পারেন। ফুসফুসে অক্সিজেন সঞ্চালন বাড়াতে দীর্ঘ শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া ব্যায়াম করার সময় জোরে শ্বাস নিতে হবে আর ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে। এতে দেহের পেশিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে দুই হাত সোজা করে পদ্মাসনে বসুন, মেরুদণ্ড সোজা রেখে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এক আঙুলে ডান দিকের নাক চেপে ধরে বাঁ দিক দিয়ে শ্বাস নিন।

ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন শ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে। ফিটনেস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে ডায়াফ্রাগমাটিক ব্রিদিং, পার্শড লিপস ব্রিদিং ইত্যাদির অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে ফুসফুসের পেশি শক্ত হওয়ার পাশাপাশি এর বাতাস ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ে। এ ছাড়া, ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে হলে ধূমপান পরিহার করতে হবে।

যেসব রোগে সর্তক থাকতে হবে

ফুসফুস ভালো রাখতে হলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পারিবারিকভাবে ফুসফুসের ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। যক্ষ্মা, হাঁপানি বা ফুসফুসের অন্য কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে