করোনা চিকিৎসায় নতুন প্রটোকল অনুমোদন

0
660
Spread the love

করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার প্রটোকল আপডেট করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে সেটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে করোনার ব্যবস্থাপনার আপডেট প্রটোকল সরকারিবেসরকারি সব চিকিৎসকের কাছে পৌঁছে যাবে। গতকাল শনিবার মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের অনলাইন মিটিংয়ে এই আপডেট প্রটোকলের অনুমোদন দেওয়া হয়।

বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মিটিংয়ে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গাইডলাইন অনুসরণ করে করোনা চিকিৎসার প্রটোকল আপডেট করা হয়েছে। এদিকে ভারতের করোনা ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলেন, দেশের মানুষের স্বার্থে আপাতত সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া এবং ভারত থেকে আসা মানুষের দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে রাখা নিশ্চিত করতে হবে।

করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার আগের প্রটোকল অনুযায়ী করোনা রোগীকে দ্রুত সুস্থ করতে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগ করা হতো। এ কারণে রোগী সুস্থ হলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতেন, দুর্বল হয়ে যেতেন। আইসিইইউ রোগীদের ক্ষেত্রেও নানা জটিলতা দেখা দিত। করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার প্রটোকল আপডেট করতে রবিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে সোসাইটি অব মেডিসিনের কর্মকর্তাবৃন্দ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বৈঠক হয়।

মৃত্যু বৃদ্ধির কারণ, কোথায় কত জনের মৃত্যু হচ্ছে, করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রটোকল আপডেট করা যায় কি না—এসব বিষয়ে পরামর্শ দিতে সোসাইটি অব মেডিসিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঐ সোসাইটির কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দেশের সেরা মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা গতকাল অনলাইনে মিটিং করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিদেশিদের গাইডলাইন অনুসরণ করে করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার আপডেট প্রটোকল করা হয়েছে। সেখানে কী করা যাবে এবং কী করা যাবে না তার বিস্তারিত সব তথ্য আছে। অনলাইন মিটিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘করোনার ভারতের ভ্যারিয়েন্টে ঝুঁকি আছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। সব কাজের মূল কাজ একটাই, তা হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এর কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি করোনার টিকা নিতে হবে। টিকা নিলে মৃত্যু ঝুঁকি কম থাকে।’

মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার আগের প্রটোকলে অনেক বেশি ওষুধ প্রয়োগ করা হতো। আর এখন আপডেট করা প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা আগের চেয়ে সহজতর হয়েছে। কী ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে, আর কী ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে না—তার সবই আপডেট প্রটোকলে আছে। তিনি বলেন, করোনার ভারতের ভ্যারিয়েন্ট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে এখন অবশ্যই সীমান্ত বন্ধ করা উচিত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, ‘ভারত থেকে যারা বাংলাদেশে আসবেন তাদের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে রাখা নিশ্চিত করার প্রস্তাব আমরা আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন সেটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে, যারা বাস্তবায়ন করবেন তারাই জানেন। তিনি বলেন, করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার আপডেট প্রটোকলের গাইডলাইন ছোট বই আকারে চলতি সপ্তাহে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে পৌঁছে যাবে।’

আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজি ল্যাবের প্রধান জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভারতের ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে তেমন একটা শঙ্কা নেই। এদেশে ইউকে ভ্যারিয়েন্টের পর আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছিল। সর্বশেষ গত কয়েক দিন আগে জি-সাইটে বাংলাদেশে ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বলে প্রকাশ করা হয়। তবে সরকার পরিস্থিতি ভালোভাবেই সামাল দিয়ে আসছে।’ বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার দু-এক সপ্তাহ পর কমে আসবে বলেও মনে করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, ভারতে যে ভ্যারিয়েন্টের কথা আমরা বলছি—ডাবল ভ্যারিয়েন্ট, তা আসলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আমরা তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন সম্ভাবনা প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিশাল সীমান্ত ভারতের সঙ্গে। তাই আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ যতই বন্ধ থাকুক, তাতে সেখানকার ভাইরাস আসবে না এই নিশ্চয়তা নেই। বাংলাদেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কিত সম্ভাব্য চিত্র সম্বলিত এ ধারণাপত্রটি গত ৩০ মার্চ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সারা দেশের কোথায় আইসিইউ ঘাটতি রয়েছে, দ্রুত আইসিইউ সম্প্রসারণ কীভাবে করা যায় এসব বিষয় নিয়ে গতকাল করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি মিটিং হয়েছে। বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে