অধ্যাপক ডা. মো. ইয়াকুব আলী
খাদ্যনালির নিচের অংশগুলোর, বিশেষ করে সিকাম, কোলন, রেক্টাম ও পায়ুপথের ক্যানসারের নামই হলো কলোরেক্টাল ক্যানসার বা বৃহদন্ত্রের ক্যানসার। এই রোগের কারণ হিসেবে মন্দ খাদ্যাভাস, জেনেটিক বা পারিবারিক কারণ, সংক্রমণ, এডনোমা বা পলিপ, ইনফ্লেমেটরি বাওয়াল ডিজিজ, বাইল অ্যাসিড রস ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়।
গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার যেমন, লাল আটা, ফলমূল খেলে ক্যানসার কম হয়। আবার মাংস, চর্বিজাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড, কম পানি পান ইত্যাদির সঙ্গে ক্যানসারের একটি যোগসূত্র রয়েছে। পরিবারে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে পরবর্তী বংশধরদেরও তা হতে পারে। তাই পরিবারে এই ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে আরও সচেতন হতে হবে।
উপসর্গ
মলদ্বারে রক্তক্ষরণ, অর্থাৎ মলের সঙ্গে রক্ত গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাইলস বলে সন্দেহ করা হয়। কিন্তু এটা ক্যানসারেরও লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি কালচে পায়খানা হয়। মলত্যাগের অভ্যাসেও পরিবর্তন ঘটতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মল পরিষ্কার না হওয়া, অল্প মল বের হওয়াও কলোরেক্টাল ক্যানসারের উপসর্গ। আবার কখনো কখনো, বিশেষ করে সকাল বেলা মিউকাস ডায়রিয়া হতে পারে। পেটব্যথা, বমি ইত্যাদি উপসর্গও থাকতে পারে। পেটে চাকা ও টিউমারের মতো অনুভূত হতে পারে। দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা ও খাবারের অরুচি এ রোগের গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। শনাক্ত হতে দেরি হলে অন্ত্র বা খাদ্যনালির বাইরে যেমন, যকৃৎ, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন চিকিৎসায় আর সুফল না–ও পাওয়া যেতে পারে।
রোগনির্ণয়
কলোনোস্কপি ও বেরিয়াম এনেমা পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। কলোনোস্কপিতে কোনো টিউমার বা ক্ষত পাওয়া গেলে বায়োপসি করতে হবে। রোগ কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা বুঝতে সিটি স্ক্যানসহ আরও পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা
কলোরেক্টাল ক্যানসারের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসায় বেশি সফলতা পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা। তাই যেকোনো সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলেই সতর্ক হতে হবে।
-প্রথমআলো