গ্রীষ্মের আন্দাজ দেওয়া শুরু হয়েছে, দেখা মিলেছে গরমের। এদিকে করোনার তাণ্ডব সেই সঙ্গে গরমের হাওয়া গায়ে লেগে গরমের নানা অসুখের দেখা যে মিলবে না তাই বা কে বলে।
কালবৈশাখী হয়েছে মাঝে মাঝে, সেই সঙ্গে বৃষ্টিও হয়েছে, ঢাকায় একদিন জলজটও হয়েছিল। গরম যখন পড়ছে যারা দু’পা হেঁটে অফিসে যান, কাজে যান তাদের কম অবশ্যই।
ভোরের তাপ ও দুপুরের তাপের মধ্যে ফারাক বেশ। ঠাণ্ডা-গরমের এ তারতম্য আমাদের শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। সর্দি-কাশি, জ্বর ও পেটের অসুখের মতো নানা অসুখ হতে পারে এখন। গরমের অসুখ খুব গুরুতর না হলেও অনেক সময় বেখেয়াল হলে গুরুতর হতেও পারে। এ সময় খাদ্য তালিকায় চাই কিছু পরিবর্তন।
* সাধারণত ঠাণ্ডা লাগা হয় বেশি। গরম পড়া শুরু হতেই সর্দি-কাশির নানা সমস্যা, সঙ্গে জ্বরও হয়।
অনেকের বাতিক আছে বাইরে থেকে এসেই ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান করতে শুরু করেন। গরম থেকে এসেই সঙ্গে সঙ্গেই ঠাণ্ডা পানি খাওয়া মোটেই কাজের কাজ নয়। তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে আর এতেই ঠাণ্ডা লাগা। দেখবেন দিনের বেলা খুব ভোরে তাপমাত্রা বেশ কম পড়ে। ঠাণ্ডা-গরমের এ ফারাকের জন্য হতে পারে সাধারণ ঠাণ্ড লাগা বা ‘কমন কোল্ড’। দেখবেন শেষ রাতেও ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব আবার ভোরেও। তাই সুতির মোটা কাপড় পরা উচিত যাতে ঠাণ্ডা না লেগে যায়। শিশু ও বয়স্কদের সাবধান হতে হয় বেশি। সামান্য সাবধান হলে ঠাণ্ডা লাগার হাত থেকে বাঁচা যায়।
* পেটের পীড়াও হতে পারে এখন। তাপমাত্রার ফারাকও ঋতু পরিবর্তনের কারণে হজমের সমস্যা হয়। খাদ্যাভ্যাস একটা বড় বিষয়। বেশি মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। বাইরের খাবার যত পারেন কম খাবেন। এখন করোনাকালে ঘরে থাকবেন বেশি, তাই ঘরে রান্না খাবার খাবেন, তেল ঝাল মসলা কম হবে।
পরিচ্ছন্ন খাবার খাওয়াও বড় কথা। বেশি মসলা ও চর্বিযুক্ত খাবার না খেলে ভালো। মাছের বা মাংসের পাতলা ঝোল, ডাল, ভাত, আটার রুটি, সবজির হালকা তেলে তৈরি তরকারি। রেড মিট, তেল মসলার ফ্যাট খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। আর পান করবেন পর্যাপ্ত পানি। অন্যান্য তরল পানীয় যেমন ঘোল, ঘরে তৈরি করা ফলের রস।
* তাই আবার বলি গরমে ঘেমে নেয়ে ঘরে এসে ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি আইসক্রিম না খাওয়া আর খাওয়াদাওয়া যা বললাম এর এদিক-ওদিক না করলে এত ভোগান্তিতে পড়বেন না।
* আর বাচ্চারা গরমে কাহিল হয় বেশি। তাই এদের সাবধানে রাখবেন আর সমস্যা হলে অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
* এ সময় ডায়রিয়া বেশি হয়। পানিবাহিত জীবাণু থেকে হয়। শরীরের পানি অনেক বেরিয়ে যায় বলে এতে কাহিল হয়ে পড়ে মানুষ বেশি। অনেক সময় দিতে হয় স্যালাইন। পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি পান না করলে এ অসুখ হয় বেশি। তাই বাইরে গেলে সঙ্গে নেবেন শুকনো খাবার ও বোতলে বিশুদ্ধ পানি।
থাকতে হবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস আসাতে ভালোই হয়েছে। রান্নাঘর খাওয়ার স্থান সব থাকবে পরিস্কার। তৈজসপত্র ধুলেও তা হবে পরিস্কার পানি দিয়ে। মুখ হাত ধুতে পরিচ্ছন্ন পানি।
কেবল ডায়রিয়া রোধ করতে কেন, সারা বছরই পান করতে হবে বিশুদ্ধ পানি। যেখানে সেখানে রাস্তাঘাটে পানি পান করা ঠিক নয়। সঙ্গে থাকবে বোতলে ভর্তি বিশুদ্ধ পানি। পানি ফুটিয়ে, আর ফিল্টার করে পান করতে হবে।
খাবারের প্রসঙ্গে আবার আসি।
খাবার বেশিক্ষণ ফেলে রাখা ঠিক নয়। ঠাণ্ডা হলে গরম করে খেলে ভালো। রাস্তার খাবার সব সময় এড়িয়ে যেতে হবে। কেবল গরমকাল নয় সব কালে। ফুচকা, ঘুঘনি, চিংড়ি ভাজা, আচার, টক পানি, এসব ছোঁবেন না। স্ট্রিট ফুড এড়িয়ে চলবেন। রেস্তোরাঁর খাবারও এড়িয়ে চলুন।
পথে সঙ্গে থাকবে শুকনো খাবার কলা, বাদাম ও পানি। আর ফল খাওয়া ভালো তবে রাস্তাঘাটে ফল খাওয়া নয়। অনেকে রাস্তার শরবত, ঘোল, লেবু পানি, আমের পানি খান এসব পান করা উচিত নয়। বরং বাসায় বসে মৌসুমি ফল ও শরবত খান। সবজি কিনে রান্না করার আগে মিনিট বিশেক পানিতে ভিজিয়ে এরপর রান্না করুন।
সামুদ্রিক মাছ, তৈলাক্ত মাছ, অল্প সিদ্ধ খাবেন না এ সময়। খাওয়ার আগে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার কথা ভুলবেন না।
* গরমে অতিষ্ঠ তবু অফিস, কাজকর্ম বাদ দেওয়া চলে না। গুমোট গরমে প্যাচপ্যাচে ঘাম একেবারে যা তা অবস্থা। অসুখের কথা তো বলেছিই। সবচেয়ে বেশি সাবধান থাকা উচিত পাঁচ বছরের নিচে বাচ্চা ও ৬৫ ঊর্ধ্ব বয়স্করা। বয়স্কদের অনেকের থাকে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্রণিক কিডনি রোগ, গরমে তাদের সমস্যা বাড়তে পারে। এদের চড়া রোদ্দুরে না বেরোনো ভালো। তবে বেলা ১১টার পর কেউ কড়া রোদে বেরোনো ঠিক নয়। ছাতা ব্যবহার, সানস্ক্রিন লাগানো, পানি পান চলবে। হঠাৎ গরম থেকে ঠাণ্ডা ঘাম বসেও ঠাণ্ডা লাগে।
* গরমে শরীর কাহিল। ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিতে পারেন চোখে মুখে। স্নান করলে আরও ভালো। দুপুরে না বেরোনো ভালো। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ফলের রস, ঘোল, নুন পানির শরবত, ডাবের পানি খুব ভালো পানীয়। বাজারে ক্যানভর্তি ফলের জুস না খেলে ভালো। শসা, জামরুল, তরমুজ, জাম, লিচু খুব ভালো। ব্যায়াম করবেন। সন্ধ্যা বেলা হাঁটুন। সাঁতার কাটতে পারেন। গরমে ভয়ানক ঘাম, শ্বাসকষ্ট হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
* বাচ্চাদের জ্বর সর্দি হয়। র্যাশ হয় শরীরে, এলার্জি। তাদের হালকা পোশাক পরতে হয়। ঘরে থাকুক। লেবুর পানি, টকদই, ফলের রস খাবে।
* অনেকের হয় ত্বকে রোগ- ঘামাচি, র্যাশ ছুলি। ভ্যাপসা গরমে হয়। ক্যালামিন লোশন লাগাতে পারেন। চুলকাবেন না। বেশি পানি পান করুন। শরীরে ঘাম জমতে দেওয়া যাবে না। ডাক্তারকে না জিজ্ঞেস করে কোনো ক্রিম লাগাবেন না।
* বাইরের পানি ও খাবার এড়িয়ে চলুন।সাবধানে থাকলে এ গরমে সুস্থ থাকতে পারি আমরা।