গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীর চুলকানি ও জন্ডিসের সমস্যাঃ করণীয় ও চিকিৎসা

0
448

অনেক সময় দেখা যায় পুরো গর্ভকালীন সময় জুড়ে মায়েদের মৃদু চুলকানির সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে এটা গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে লক্ষ্য করা যায়। সাথে মৃদু জন্ডিস (S.Bilirubin 5-6 mg/dl) থাকতে পারে এবং সেটা চুলকানি শুরু হওয়ার ২ সপ্তাহ পর থেকে দেখা দেয়। প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ এবং মলের রং সাদাটে বর্ণ ধারণ করে।
স্বাস্থ্য সাধারণত অটুট থাকে এবং কোন ব্যথা থাকে না। তবে দেহের ওজন বেশ কমে যেতে পারে।
শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর জন্ডিস চলে যায় এবং ১-২ সপ্তাহের মধ্যে চুলকানিও বন্ধ হয়ে যায়।
এরূপ চুলকানির সমস্যার পুনরাবৃত্তি পরবর্তী গর্ভধারণের সময়ও দেখা দিতে পারে।

ল্যাব টেস্টঃ
S. Bilirubin ও S. Alkaline Phosphatase বেড়ে যায় কিন্তু SGPT, SGOT ও GGT সাধারণত নরমাল থাকে।
সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর S. Bilirubin ও S. Alkaline Phosphatase এর মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে।
ভিটামিন কে এর ঘাটতির জন্য Prothrombin time বেড়ে যায়।
Steatorrhea বা মলের সাথে প্রচুর পরিমানে চর্বি নিঃসৃত হয়।

গর্ভাবস্থায় কোলেস্ট্যাটিক চুলকানি সাধারণত পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী হয়ে থাকে এবং দেখা যায় মা, বোন ও তাদের কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। এদের মধ্যে যারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করেন তাদেরও এমনটা হতে পারে।

রোগ নির্ণয়ঃ
প্রথম গর্ভধারনের সময় ভাইরাস জনিত জন্ডিস থেকে এ অবস্থাটি পৃথক করা কঠিন হয়ে পড়ে।
শুধু মাত্র চুলকানি এবং S. Bilirubin ও S. Alkaline Phosphatase এর মাত্রা বৃদ্ধি দেখে এই রোগ নির্ণয় করতে হয়। এখানে ভাইরাস জনিত জন্ডিসের মতো খাওয়ায় অরুচি, বমি কিংবা বমি বমি ভাব, জ্বরের অনুভূতি ইত্যাদি লক্ষ্মণ উপসর্গগুলো সাধারণত থাকে না।

চিকিৎসাঃ
যথাযথ খাবার ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
গর্ভপরবর্তী রক্তপাত এড়াতে সন্তান ডেলিভারির অন্তত ৬ ঘন্টা পূর্বে ভিটামিন কে গ্রহণ করতে হবে।
ডেক্সামিথাসন ১২ মিগ্রা/দিন করে ৭ দিনের জন্য (যা চুলকানি কমায় এবং শিশুর ফুসফুসের উন্নয়নে সহায়তা করে);
আরসোডিঅক্সিকোলিক এসিড ১-২ গ্রাম/দিন (যা চুলকানি কমায়, লিভার ফাংশনের উন্নয়ন ঘটায় এবং শিশু মৃত্যুর হার কমায়); বর্তমানে এটাই গর্ভাবস্থায় চুলকানির ফার্স্ট-লাইন চিকিৎসা হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

রোগের গভীরতা ও খারাপ পরিণতি অনুধাবন করে গর্ভাধারণের ৩৬ কিংবা ৩৮ সপ্তাহের মধ্যে ডেলিভারি করিয়ে নিতে হবে।
অনাগত শিশুর বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে – গর্ভপাত হয়ে যাওয়া, শিশু পুর্নাঙ্গ হওয়ার পূর্বেই ভূমিষ্ট হয়ে যাওয়া, অপূর্নাঙ্গ শিশুর জন্ম, গর্ভকালীন শিশুর শ্বাসকষ্ট এমনকি শিশুর মৃত্যু। তাই অনাগত শিশুকে অত্যন্ত যত্ন সহকারে মনিটর করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ডেলিভারি করিয়ে নিতে হবে। শিশুর পরিণতি ভালো হতে পারে যদি মা আরসোডিঅক্সিকোলিক এসিড গ্রহণ করে থাকেন।

মায়ের রোগ পরিণতি অত্যন্ত চমৎকার। মাকে এই বলে সতর্ক করে দিতে হবে যে, পরবর্তী গর্ভধারণের সময়ও এই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে এবং চুলকানি আরও বাড়তে পারে যদি তিনি জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করে থাকেন।

 

ডাঃ এম সাঈদুল হক
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চীফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে