গুরুতর অসুস্থ কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে রোশের আর্থ্রাইটিসের ওষুধ অ্যাকটেমরা বা সানোফির কেভজারা মৃত্যু হার এবং ইনটেনসিভ কেয়ারে থাকার সময় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে পারে বলে তথ্য মিলেছে এক গবেষণায়।
গতকাল রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই গবেষণার ফলাফল এখনো সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের স্বাধীন পর্যালোচনার অপেক্ষায় আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ইমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগ (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে যা দমিয়ে রাখে) অ্যাকটেমরা ও কেভজারা গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুর হার ৮.৫ শতাংশ পয়েন্ট পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে। এ গবেষণায় যুক্ত থাকা লন্ডন ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক অ্যানটোনি গর্ডন বলেন, এর মানে হলো, হাসপাতালে যাদের ওই দুটি ওষুধের মধ্যে একটি দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রতি ১২ জনের মধ্যে বাড়তি একজনের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, মানুষের হাতে থাকা কিছু ওষুধ যে কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় উপকারে লাগতে পারে, সেই আত্মবিশ্বাসকে মজবুত করবে এই গবেষণার ফলাফল। গত এক বছরে ১৮ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে নতুন করোনাভাইরাস। এ রোগের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ এখনো মানুষ তৈরি করতে পারেনি। আর এমন এক সময়ে এই গবেষণার তথ্য প্রকাশিত হলো, যখন যুক্তরাজ্য আর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক দুটি নতুন ধরন বহু দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
হাসপাতালে রোগী বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন যুক্তরাজ্য সরকার এরই মধ্যে জানিয়েছে, হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ওই দুটি ওষুধ দেওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকদের শিগগিরই নির্দেশনা দেওয়া হবে। যুক্তরাজ্যের ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার জোনাথন ভ্যান-ট্যাম বলেছেন, প্রাণ বাঁচানোর পাশাপাশি হাসপাতাল ও আইসিইউ এর ওপর চাপ কমাতে এসব ওষুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
কভিড-১৯ এর চিকিৎসায় আলাদা কোনো ওষুধ এখনো তৈরি না হওয়ায় অন্যান্য ওষুধের মধ্যে কোনগুলো এ রোগের উপশমে কাজে লাগতে পারে, তা নিয়ে কাজ চলছে বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে জেনেরিক স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসন এবং গিলিয়াডের অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির কিছু দেশে গুরুতর কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। খবরে বলা হয়, অ্যাকটেমরা ও কেভজারা নিয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণাটি চালানো হয়েছে গুরুতর অসুস্থ ৮০০ কভিড-১৯ রোগীর ওপর।
এ গবেষণার নাম দেওয়া হয়েছে রিম্যাপ-ক্যাপ ট্রায়াল। গবেষণায় দেখা গেছে, ওই দুটি ওষুধের যে কোনো একটি প্রয়োগের পর মৃত্যুর হার ৩৫.৮ শতাংশ থেকে কমে ২৭.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। তাছাড়া ওই দুটি ওষুধ দেওয়ার পর রোগীরা তুলনামূলকভাবে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। রোগীদের আইসিইউতে থাকার গড় সময় সাত থেকে দশ দিন কমে এসেছে।