কোভিড অতিমারিতে বেড়েছে মানুষের শারীরিক-মানসিক চাপ, ভর করেছে দুশ্চিন্তা-অনিশ্চয়তা। এর প্রভাবে কমেছে ঘুম। রাতে ঘুমের সময়টাতে কমবেশি সবারই হাতের মুঠোয় রাখা মোবাইলে আটকে থাকে দুচোখ।
চোখ খুঁজে ফিরে কেউ কি মেসেজ পাঠিয়েছে, সদ্য আপলোড করা ছবিটায় কয়টা লাইক পড়লো বা কয়টা কমেন্ট করলো অথবা আপনি মেসেজ পাঠিয়েছেন অন্য কাউকে কিন্তু সে ফিরতি মেসেজ দিচ্ছে না অনলাইন থাকা সত্ত্বেও- এসব ভাবতে ভাবতেই রাতের ঘুমের দফারফা হয়ে যায়। কিন্তু জানেন কি, কম ঘুমের ফলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ভয়ঙ্কর সব রোগ। হতে পারে সাডেন হার্ট অ্যাটাকও।
শিশু থেকে বৃদ্ধ, বয়স যাই হোক, শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে, একটানা ভালো ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। মোবাইল থেকে নির্গত রেডিয়েশন ক্যান্সার জাতীয় সমস্যা সৃষ্টিও করতে পারে। সাধারণত ২৫ থেকে ৪৫ বয়সের মধ্যেই মোবাইল ব্যবহারের প্রবণতা তুলনামূলক বেশি। নিত্যদিনের কাজের জন্য বাড়তি স্ট্রেসেও ভুগেন তারা। এর থেকে রেহাই পেতে অনেকেই মোবাইলে মন সঁপে দেন ঘুমাতে যাওয়ার আগে। আর তাতেই হয় সাড়ে সর্বনাশ।
মানসিক চাপে ঘুমের ক্ষতি হয়ে যায়। তাই রাতে এড়িয়ে চলুন মোবাইল ফোন। পারলে হাতের নাগালের বাইরে রেখে দিন মোবাইল। অনেকেই মোবাইল ফোনে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েন, যা মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আবার অনেকে মেবাইলে মুভি দেখেন, অন্ধকারে ফোনের স্ক্রিনের আলো চোখের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। যা ঘুম আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
রাতের ঘুমের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে হার্টের। রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রয়োজন। কম ঘুম হলে বেড়ে যায় কার্ডিও-ভ্যাসকুলার ডিসিজের সমস্যা। তবে রাতের ঘুমের বিকল্প কিন্তু যে কোনো সময়ে ঘুম নয়। অনেকে রাতে জেগে দিনে ঘুমান, এটা ঠিক নয়। সম্ভব হলে রাতের খাবারের পর আধঘণ্টা ঘরে হাঁটতে পারেন। এরপর বিছানায় গা এলিয়ে দিতে পারেন ঠাণ্ডা মাথায়। চোখ বুজে শুয়ে ভালো কিছু চিন্তা করতে করতে ঘুমের অপেক্ষা করুন।
উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে ঘুমের সময়ের সঙ্গে কোনো আপস করা যাবে না। সমস্যা যাই থাকুক ঘুমের শুরুটা যেন নিশ্চিন্তে হয়, সেটা খেয়াল রাখা জরুরি। তাই ঘুমের আগে যে কোনো মন চঞ্চল করা বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে। যদি রাতে প্রায়ই অনিয়মিত ঘুম হয়, তাহলে নিজের ইচ্ছে মত ঘুমের ওষুধ না খেয়ে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
এক নজরে ভালো ঘুমের টিপস-
-
- রাতের খাবার খাওয়ার আধ ঘণ্টা পর ঘুমাতে যাবেন।
- ঘুমের আগে মোবাইলে গান শোনা বা সিনেমা দেখা এড়িয়ে চলবেন।
- ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
- পেটে অ্যাসিডিটি হতে পারে এমন খাবার রাতে খাবেন না। এতে ঘুমে ব্যাঘাত হয়। অনেকেরই শুয়ে পড়লে খাবার মুখ দিয়ে উঠে আসে।
- যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হালকা ডোজের ওষুধ খেতে পারেন।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে চা কফি খাবেন না।