ছোট বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন

0
490

নবজাতক বা শিশুর সুন্দর ও সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে প্রয়োজন-

১. পর্যাপ্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার ২. মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুস্থ পরিবেশ ৩. মা ও শিশুর পরিচর্যা বা লালন পালন। এ ছাড়া, রোগ-বালাই ও জীবাণু থেকে মুক্ত রাখা, রোগ নির্ণয় ও যথোপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান অপরিহার্য। শিশুর সুস্থতায় বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণ, অনিরাপদ পারিবারিক পরিবেশ ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। জন্মগত ভাবে নবজাতকের স্কিনে ঠবৎহরী নামক একটি পদার্থ লাগানো থাকে, যা দেখতে অনেকটা ময়লা বা আঁশের মতো, এটি শরীরের তাপ, পানি ধরে রাখে এবং বিভিন্ন রোগ জীবাণু ত্বকে বসতে দেয় না। তাই এটি সরিয়ে ফেলা উচিত নয়। শিশুর ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই প্রতিটি শিশুর ত্বকের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত।

অবশ্যই করণীয়:

কাপড়-চোপড় অবশ্যই খসখসে, অমসৃণ হওয়া উচিত নয়; হতে হবে নরম ও মসৃণ।

কাপড়টি সুতির হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ ত্বকের জন্য সুতির কাপড়ই সবচেয়ে নিরাপদ। কাপড়টি বেশি আঁটসাঁট হওয়া উচিত নয়। কারণ আলো-বাতাস প্রবেশ করতে না পারলে ঘাম আটকে থাকে এবং বিভিন্ন চর্মরোগ সৃষ্টি হয়। তাই পোশাক-পরিচ্ছদ যতটা সম্ভব ঢিলেঢালা হওয়াই ভালো। আর পোশাক-পরিচ্ছদ সব সময় শীত-গ্রীষ্মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সফ্‌ট ডিটারজেন্ট দিয়ে নবজাতকের কাপড় ধুতে হবে, কখনোই বড়দের কাপড়ের সঙ্গে একত্রে ধুবেন না। মুখ বাদে সারা শরীর সফ্‌ট টাওয়েল বা সফ্‌ট কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।

* শিশুর শরীরে Essential Oil থাকে, যা স্কিনকে সুন্দর, মসৃণ ও রোগমুক্ত রাখে; তাই নবজাতককে সপ্তাহে ১ বার বা তারচেয়েও কম গোসল করানো ভালো। জোরে ঘষা দিয়ে গোসল করানো যাবে না (Only sponge bath)/ সফ্‌ট কাপড় পরাতে হবে।

* শিশু প্রস্রাব-পায়খানা করার পর যত শিগগিরই সম্ভব ভেজা ন্যাপকিন বদলে ফেলা উচিত। কারণ দীর্ঘক্ষণ থাকলে ন্যাপকিন র‌্যাস বা ন্যাপকিন একজিমা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর অবশ্যই ঘন ঘন ডায়াপার চেক করুন এবং ভেজা ডায়াপার দ্রুত সরিয়ে ফেলুন। ডায়াপার এরিয়া ঘষে পরিষ্কার করবেন না, সফ্‌ট কাপড় বা তুলায় পানি নিয়ে স্পন্‌জ করে মুছে ফেলুন।

* শিশুর কাপড়-চোপড় সাবান দিয়ে ধোয়ার পর পরিষ্কার পানিতে বারবার চুবিয়ে সম্পূর্ণ সাবানমুক্ত করে শুকানো উচিত; কারণ সাবানের ক্ষারযুক্ত শুকনো কড়কড়ে কাপড় শিশুর নরম ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
* শিশুরা হাত-পা বেশি নাড়াচাড়া করে এবং হাত মুখে দেয়, তাই নখ কেটে ছোট রাখতে হবে; যাতে নিজের মুখে নিজে আঘাত না পায় এবং রোগ জীবাণু নখের মাধ্যমে মুখে না যায়।

* শিশুদের ত্বকে অ্যান্টিসেপটিক ও কসমেটিক-জাতীয় কোনো মলম যখন-তখন না লাগানোই ভালো। কারণ এতে শিশুর নরম ত্বকে অনেক সময় এগুলো সহ্য হয় না এবং সমস্যা সৃষ্টি হয়। নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল অথবা সানফ্লাওয়ার অয়েল মাখতে পারেন, ডায়াপার এরিয়াতে বেবী পাউডার লাগাতে পারেন।
* ত্বকে আঘাত পেতে পারে এ রকম খেলনা বা ব্যবহার্য জিনিসপত্র সব সময় শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত।

* কাদামাটি, ধুলাবালু ও কড়া রোদ থেকে শিশুদের দূরে রাখুন।
* মশা, মাছি, পোকামাকড়, পিঁপড়া ইত্যাদি যেন শিশুকে কামড়াতে না পারে, সেদিকে সর্বদা লক্ষ্য রাখুন। কারণ এ থেকে হঠাৎ মারাত্মক অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে।

* বাড়িতে পোষা কুকুর-বিড়াল না রাখাই ভালো। কারণ এদের শরীর থেকে বেশ কিছু চর্মরোগের জীবাণু সংক্রমণ হয়ে থাকে; যা শিশুকে সহজেই আক্রান্ত করতে পারে। শেষ কথা হলো, শিশুর ত্বকে  কোনো সমস্যা দেখা দিলে কখনো অবহেলা করবেন না; কারণ শিশুদের খুব ছোট রোগও অনেক সময় অল্প সময়েই মারাত্মক আকার ধারণ করে। যেমন সাধারণ খঁজলি-পাঁচড়া থেকেও কিডনি নষ্ট হয়ে শিশুর মৃত্যু হতে পারে।

লেখক:

ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল

সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে