প্রকৃতি শরৎ সাজে সেজেছে। তবে বৃষ্টি তার মায়া এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। হুটহাট করেই চলে আসছে। এদিকে রোদও তার কড়া মেজাজ দেখিয়ে যাচ্ছে যখন-তখন। এভাবে দিনে তাপমাত্রা যখন তখন বাড়ছে-কমছে। আবার ভোরের দিকে ঠান্ডা লাগছে। আবহাওয়ার এমন খেয়ালিপনায় অনেকেই এখন জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনার সময় এ উপসর্গ আতঙ্কের হলেও, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাদের কারও কারও করোনা ও ডেঙ্গি ধরা পড়লেও অধিকাংশই ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত। প্রায় ঘরে ঘরে এখন এমন রোগী।
চিকিৎসকদের মতে, হঠাৎ বৃষ্টি, ভ্যাপসা গরম আবার কিছুটা শীতল বাতাস এ সময়ের এমন আবহাওয়ায় শ্বাসতন্ত্র সহজেই সংক্রমিত হয়ে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। এ ছাড়া ঘামেভেজা জামাকাপড় পরে থাকা, দীর্ঘক্ষণ গোসল করা, রাতে একটানা দীর্ঘসময় এসি চালানো, ফ্রিজের ঠান্ডা পানি বা আইসক্রিম খাওয়ার কারণে ঠান্ডা লেগেও এখন সর্দি-কাশি দেখা দিচ্ছে।
লক্ষণ
-জ্বর
-শরীর, মাথা ও গলা ব্যথা
-চোখ লাল হওয়া
-নাক দিয়ে পানি পড়া
-হাঁচি-কাশি
-শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
-খাওয়ার অরুচি
প্রতিকারের উপায়
* ঘুম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাজেই ঠান্ডা বা সর্দিজ্বরের সময় বিশ্রাম নিলে বা বেশি ঘুমালে দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব।
* ঘরোয়া দাওয়াই হিসাবে এ সময় আদা-লেবুমিশ্রিত রং চা, আদা ও লেবুর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার খেতে পারেন। আরামবোধ করবেন। আঙুরের রসও কাশি দ্রুত কমাতে সাহায্য করে।
* ফ্রিজের ঠান্ডা পানি একেবারেই খাবেন না। গলাব্যথা হলে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করুন।
* ঋতু পরিবর্তনের এ সময় শরীরে প্রচুর পানি প্রয়োজন। শরীর ডিহাইড্রেটেড হলেই গায়ে ব্যথা, মাথাধরা শুরু হয়। সুস্থ-অসুস্থ সবাইকেই তাই এ সময় বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। সেইসঙ্গে খেতে হবে তাজা ফলের জুস।
* বিটা-ক্যারোটিন ও ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘ই’ যুক্ত খাবার ঠান্ডা কমাতে সহায্য করে। লেবু, কমলা, জাম্বুরা, আমড়াসহ বিভিন্ন টকজাতীয় ফল জ্বর-সর্দি-কাশিতে উপকারী।
শিশুর বাড়তি যত্ন
বড়দের মতো শিশুদেরও এখন জ্বর-সর্দি-কাশির উপসর্গগুলো বেশি দেখা দিচ্ছে। শিশু জ্বরে আক্রান্ত হলে জ্বর কমানোর জন্য মাথায় পানি ঢালুন। পাশাপাশি শরীর স্পঞ্জ করে দিন। মাথায় পানি দেওয়ার পর শুকনো তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মাথা মুছে দিন, নইলে সর্দি-কাশি বাড়তে পারে। জ্বর হলে শিশুকে অতিরিক্ত জামাকাপড় পরিয়ে রাখা উচিত নয়। এতে শরীরের তাপ আরও বেড়ে যায়। শিশু ঘামতে শুরু করে। এ ঘাম থেকে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই ঘরের দরজা জানালা খুলে আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন। শিশুকে ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবারের পাশাপাশি মুরগির স্যুপ, দুধ, সুজির মতো হালকা এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে দিন। বুকের দুধ শিশুকে দ্রুত সুস্থ করে তোলে। এ কারণে বুকের দুধ খাওয়া শিশু সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলে মায়ের বুকের দুধ খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে। ভাইরাস জ্বর সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন থাকে এবং ঘরোয়া চিকিৎসায়ই শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে। তাই এ সময়টাতে কোনো এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো উচিত নয়। বাজারে প্রচলিত কাশির সিরাপ সব সময় শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। শিশুর ঠান্ডা লেগে বুকের ভেরত আওয়াজ হলে, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হলে, শরীরের রং নীল হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
মেনে চলুন
* হালকা জ্বর বা গায়ে ব্যথা হলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া একেবারেই ঠিক হবে না। এতে সমস্যা বাড়তে পারে।
* বড়দের ৭ দিনের বেশি জ্বর থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।