টিকা নিতে পিছিয়ে নারীরা

0
680
Spread the love

কোনো ধরনের গুজব নয়, নিজে টিকা নিন, অন্যকে টিকা নিতে উৎসাহ দিন; এ আহ্বানে দেশে করোনাভাইরাস টিকাদান কর্মসূচি এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমেই বাড়ছে টিকাগ্রহীতাদের আগ্রহ। শুরুর দিকে একটা ভয় কাজ করলেও এখন স্বাচ্ছন্দ্যে টিকা নিচ্ছেন অনেকেই। তবে টিকা নেওয়া ও নিবন্ধনে পিছিয়ে রয়েছে নারীরা। পুরুষের তুলনায় নারী টিকাগ্রহীতার সংখ্যা প্রায় অর্ধেক।

গণটিকাদান শুরুর ১৩ দিনে দেশজুড়ে টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৬৪ জন। আর এ পর্যন্ত মোট টিকা নিয়েছেন ২০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৫ জন অর্থাৎ ৬৬ দশমিক ২০ শতাংশ। নারী টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ৭ লাখ ৩ হাজার ৯৪২ জন অর্থাৎ ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ। টিকা গ্রহণে নারীদের সংখ্যা পুরুষের অর্ধেক। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, টিকা কার্যক্রমে নারীরা এগিয়ে আসছে না। গরিব, অসচ্ছল, ভাসমান মানুষ এখনো টিকা নিচ্ছে না। এদের কাছে টিকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। করোনাভাইরাসের টিকার কর্মযজ্ঞকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতাদের টিকাদান কার্যক্রমে এগিয়ে আসতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, গতকাল টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ টিকাগ্রহীতা ১ লাখ ৪৫ হাজার ২৮০ জন, নারী টিকাগ্রহীতা ৮৯ হাজার ২৮৪ জন। রাজধানীতে টিকা নিয়েছেন ৩০ হাজার ৯১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৯ হাজার ২১৯ জন, নারী ১১ হাজার ৬৯৫ জন। ঢাকা বিভাগে ৬৯ হাজার ৮৫৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ হাজার ৪৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৩ হাজার ৬৩৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৭ হাজার ২৪৭ জন, রংপুর বিভাগে ২১ হাজার ২৮৪ জন, খুলনা বিভাগে ২৮ হাজার ৩৫৫ জন, বরিশাল বিভাগে ১০ হাজার ২৮৮ জন, সিলেট বিভাগে ১৩ হাজার ৮৫১ জন টিকা নিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত করোনার টিকা নিতে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন ৩১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮৩ জন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিবন্ধন করেছিলেন ২৮ লাখ ৩৩ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে ১৭ লাখ ৮৬ হাজার ১১৯ জন পুরুষ এবং ১০ লাখ ৪৭ হাজার ১৩১ জন নারী। নিবন্ধিত পুরুষদের ৬০ শতাংশের বেশি টিকা নিলেও নিবন্ধিত নারীদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন ৫০ শতাংশের কম। নিবন্ধনেও পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে নারীরা।

এ ব্যাপারে করোনা প্রতিরোধে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে নারীরা পিছিয়ে থাকে। নিবন্ধন কম হওয়া ও টিকা কম নেওয়ার বিষয়টি তারই প্রতিফলন। তবে নারীদের জন্য বিশেষ প্রচারের ব্যবস্থা করলে এবং সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিলে নিবন্ধন ও টিকাগ্রহীতা বাড়তে পারে বলে পরামর্শ দেন তিনি।’ দেশে প্রতি বছর ৩২ লাখ নারী গর্ভধারণ করেন। গর্ভবতী ও যেসব মায়েরা শিশুদের দুধ পান করান তারা টিকা কর্মসূচির বাইরে রয়েছে। এ জন্য টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে নারীর হার কম বলে মনে করেন করোনা প্রতিরোধে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রওশন আরা বেগম। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা নিলে বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে এমন গুজবের কারণেও অনেক নারীরা টিকা নিতে চাচ্ছেন না। বিষয়টি আসলে তা নয়। টিকার সঙ্গে বন্ধ্যত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। গর্ভবতী ও যেসব মায়েরা শিশুদের দুধ পান করান তারা বাদে ১৮ বছরের বেশি বয়সী যারা সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তাদের এখনই টিকা নেওয়া উচিত। যাতে পরবর্তীতে গর্ভবতী হলে নিরাপদে থাকতে পারে। কারণ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কত দিন থাকবে তা এখনো জানা যায়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে