ডায়াবেটিসের নতুন কারণ উদ্ভাবনের দাবি গবেষকদের

0
459
Spread the love

ডায়াবেটিসের বড় একটি কারণ আবিষ্কারের দাবি করেছেন একদল গবেষক। তাদের মতে, যাদের আইএপি (ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস) লেভেল বেশি, তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। যাদের আইএপি কম, তাদেরই আশঙ্কা বেশি। দেহে আইএপি কম হলে হৃদরোগও হতে পারে। কারণ এতে বেড়ে যায় খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা।

বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার এ কারণ আবিষ্কারের দাবি করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মধু এস মালো ।

গবেষণাটি বারডেমের প্রফেসর ফারুক পাঠান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক সালিমুর রহমান ও অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসানাত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালেকুল ইসলামের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে ।

সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ও আমেরিকান ডায়াবেটিস সমিতির যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত জার্নাল ‘দি বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড কেয়ার’-এ প্রকাশ হয়েছে এ গবেষণার বৃত্তান্ত।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল ও সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পাঁচ বছর ধরে ৩০ থেকে ৬০ বছরের ৫৭৪ জন ব্যক্তির ওপর এই গবেষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মধু এস মালো।

তিনি বলেন, ‘প্রথমে ইঁদুরের ওপর একটি গবেষণা করি। সেখানে দেখা যায়, যেসব ইঁদুরের পেটে আইএপি নামক পাচক রস কম, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। মানবদেহের অন্ত্রে থাকা ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকালাইন ফসফাটেস নামক এনজাইম এই টক্সিন ধ্বংস করে দেয়। এ এনজাইমের ঘাটতি হলে অন্ত্রে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হয়। এই টক্সিন রক্তে ঢুকে সিসটেমিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। এতে একদিকে যেমন ডায়াবেটিস হতে পারে, তেমনি ইশকেমিক হার্ট ডিজিজও হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্ত্রে থাকা মৃত ব্যাকটেরিয়ার কোষ-প্রাচীরের অংশ টক্সিন (এডোটক্সিন) হিসেবে কাজ করে। এই টক্সিন সাধারণত মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, ফ্রুকটোজ বা অ্যালকোহল ওই টক্সিনকে রক্তে ঢুকতে সহায়তা করে। এতে নিম্ন গ্রেডের সিসটেমিক প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এতেও ডায়াবেটিস হতে পারে।’

এসময় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ বলেন, ‘ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রধান কারণই হলো আইএপি লেভেল বেড়ে যাওয়া। এছাড়া মুটিয়ে যাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়া, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হওয়া— এসবও অন্যতম। আমাদের দেশে আবার ১৫ শতাংশ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে জিনগত কারণে। যেটা প্রতিরোধে এখন আমাদের কিছুই করার থাকে না। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইএপি সংক্রান্ত কারণেই ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।’

গবেষণায় জানা যায়, যাদের শরীরে আইএপি এনজাইম বেশি থাকে তাদের তুলনায় যাদের আইএপি কম তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার হার ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেশি। যাদের অন্ত্রে এনজাইমটি কম ছিল এবং পরে বেড়েছে তাদের ডায়াবেটিস হয়নি।

ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল, হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন ড. মালো। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির উপদেষ্টা এবং বারডেমের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত।

সংবাদ সম্মেলনে ড. মালো ও অন্যরা বলেন, ‘আমরা একটি কিট তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে তিন থেকে পাঁচ মিনিটেই বোঝা যাবে আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা কতটুকু। শরীরে আইএপি এনজাইমের পরিমাণ ১১৫ ইউনিটের কম হলেই তা ডায়াবেটিস হওয়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে। ঠিক সেসময় ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।’

ড. মধু এস মালো বলেন, ‘আমরা এ কিট নিয়ে আরও গবেষণা করবো। এ কিটের বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এটি সফল হলে দেশের মানুষের জন্য অনেক বড় কল্যাণ বয়ে আনবে।’

গবেষণায় সহযোগিতা করেছেন বাডাসের জগন্নাথ মালো, মো. মেহেদী হাসান রকি, জিনোক বর্মন, শামেমা আক্তার তিন্নি, স্বপন কে. বর্মন, তাপস সরকার, বারডেমের ড. মো. আব্দুল মোত্তালিব ও মো. নাঈমুল ইসলাম খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল, হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কনকরাজু কালিযান্নান প্রমুখ ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে