উচ্চ রক্তচাপ থাকা যারা প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে প্যারাসিটামল গ্রহণ করেন তাদের হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যুক্তরাজ্যে একটি গবেষণায় এ ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
স্কটল্যান্ডের এডিনবরা ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলেছেন, অনেক মাস ধরে প্যারাসিটামল গ্রহণকারী রোগীদের ঝুঁকি এবং উপকারিতা সম্পর্কে চিকিৎসকদের ভালো করে চিন্তাভাবনা করা উচিত। তবে তারা জোর দিয়ে বলেছেন, নৈমিত্তিক মাথাব্যথা এবং জ্বরের জন্য এই সাধারণ ব্যথানাশকটি গ্রহণ নিরাপদ।
প্যারাসিটামল সারা বিশ্বে সাময়িক ব্যথা এবং যন্ত্রণার স্বল্পমেয়াদী প্রতিকার হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে পুরনো বা স্থায়ী ব্যথাবেদনার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে এর উপকারের প্রমাণ মিলেছে সামান্যই। তা সত্ত্বেও দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসায় অনেক সময় এটি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
গবেষণায় ১১০ জন স্বেচ্ছাসেবককে অনুসরণ করা হয়েছে। এদের দুই-তৃতীয়াংশ উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের জন্য ওষুধ সেবন করছিলেন। একটি দৈবচয়ন পরীক্ষায় তাদের দুই সপ্তাহের জন্য দিনে চারবার ১ গ্রাম করে প্যারাসিটামল খেতে বলা হয়েছিল। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার রোগীদের জন্য এটি একটি প্রচলিত ডোজ। তারপরে আরও দুই সপ্তাহের জন্য ‘নকল বড়ি’ দেওয়া হয় (প্লাসেবো, যাতে আসলে কোনো ওষুধ থাকে না)।
এডিনবরা ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজিস্ট অধ্যাপক জেমস ডিয়ার বলেন, ওই পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্লাসেবো যাদের দেওয়া হয়েছিল তাদের তুলনায় প্যারাসিটামল গ্রহণকারীদের রক্তচাপ অনেক বেশি বেড়েছে। এটি হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকিগুলোর মধ্যে একটি।
গবেষকরা চিকিৎসকদের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার রোগীদের শুরুতে যতটা সম্ভব কম মাত্রায় প্যারাসিটামল দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ওপর কড়া নজর রাখতে বলেছেন।
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন, এ গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে আরও বেশি লোকের ওপর দীর্ঘ সময়সীমা ধরে গবেষণা করা প্রয়োজন।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জর্জেস- হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজি এবং থেরাপিউটিকস বিষয়ের প্রভাষক ডা. দীপেন্দর গিল বলেছেন, ‘সার্কুলেশন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় ‘একটি শ্বেতাঙ্গ স্কটিশ জনগোষ্ঠীর রক্তচাপে মৃদু কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি’ পাওয়া গেছে। তবে অনেক কিছু এখনো অজানা। ’
ডা. গিল বলেন, ‘প্রথমত, প্যারাসিটামলের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে রক্তচাপের পরিলক্ষিত বৃদ্ধি বেশি সময় অব্যাহত থাকবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ’
‘দ্বিতীয়ত, প্যারাসিটামল ব্যবহারজনিত রক্তচাপের বৃদ্ধি হৃদযন্ত্রের রোগের ঝুঁকি বাড়াবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ’
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বড় একটি গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদী প্যারাসিটামল ব্যবহার এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধির মধ্যে যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছিল। তবে একটি যে অন্যটির কারণেই ঘটেছিল তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করা যায়নি।
অন্য কিছু ছোট গবেষণাও এ দুটির মধ্যে যোগসূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি।
এডিনবরার গবেষক দল বলেছে, তারা প্যারাসিটামল ঠিক কীভাবে রক্তচাপ বাড়াচ্ছে তা ব্যাখ্যা করতে পারেননি। তবে এ গবেষণার ফলাফল দীর্ঘমেয়াদী প্যারাসিটামল ব্যবহারের প্রেসক্রিপশনের বিষয়টি আবার ভেবে দেখার তাগিদ দেবে। এটিকে আগে নন-স্টেরয়েড প্রদাহবিরোধী ব্যথানাশক যেমন, আইবুপ্রোফেনের চেয়ে নিরাপদ বলে মনে করা হত। আইবুপ্রোফেনজাতীয় ওষুধ কিছু লোকের রক্তচাপ বাড়ায় বলে মনে করা হয়।
গবেষণাটিতে অর্থায়নকারী ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন বলেছে, এমনকি ‘প্যারাসিটামলের মতো তুলনামূলকভাবে অক্ষতিকর’ কোনো ওষুধের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না তা ডাক্তার এবং রোগীদের নিয়মিতভাবে পুনর্বিবেচনা করে দেখা উচিত।
যুক্তরাজ্যের স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের ডা. রিচার্ড ফ্রান্সিস বলেছেন, ‘আরও ব্যাপকভাবে প্যারাসিটামল ব্যবহার করার ঝুঁকি এবং সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে অধিকতর দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর রক্তচাপযুক্ত লোকের ওপর গবেষণার প্রয়োজন। ’
সূত্র: বিবিসি