বিশ্বে প্রতি বছর সাত কোটি মানুষ কিডনি রোগে মারা যায়। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ৪০ হাজার। অথচ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে এবং সতর্ক থাকলে কিডনির জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
এ ব্যাপারে জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, কিডনি রোগের প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। এ দুটি বিষয় নিয়ন্ত্রণে থাকলে এড়ানো যায় কিডনি জটিলতা। সতর্ক থাকলে এটাকে প্রতিরোধ, প্রতিকার করা যায়।
কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক হারুন আর রশীদ বলেন, কিডনি রোগের উপসর্গ প্রাথমিকভাবে বোঝা যায় না। যখন বোঝা যায়, তখন বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য, শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়াসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায় বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. হাসিনাতুল জান্নাত বলেন, কিডনির নানা রোগের মধ্যে অন্যতম নষ্ট হয়ে যাওয়া। আরেকটি রোগ হলো, কিডনিতে প্রোটিন চলে যাওয়া। প্রোটিন আমাদের শরীরে পেশি তৈরি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। বেশিরভাগ প্রোটিন লিভারে তৈরি হয় এবং এর প্রাথমিক উৎস হলো খাবার।
কিডনি দিয়ে প্রোটিন যাওয়ার রোগ হলে শরীর থেকে অনেক বেশি প্রোটিন বেরিয়ে যায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ফলে রোগীর পায়ে পানি জমে এবং প্রেসার বেড়ে যায়। এতে শরীরের মধ্যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে কলকব্জা রয়েছে, সেগুলোর কাউন্টার অ্যাকক্টিভ (বিপরীত কাজ) শুরু হয়। এতে শরীরে অ্যালবুমিন কমতে থাকে এবং প্রেসারও বাড়তে থাকে। এতে রোগী খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অ্যালবুমিন একটি অপরিহার্য প্রোটিন উপাদান, যা টিস্যু বা কলাগুলোর স্বাস্থ্যকে বজায় রাখে। রক্তক্ষরণকে প্রতিরোধ করে এবং এটি শরীরের মধ্যে তরল, রক্ত এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ টিস্যুর স্বাস্থ্যকে বজায় রাখার জন্য সঞ্চালিত হয়।
অনেকেই শুধু শরীর ফোলাকে কিডনি রোগ বা কিডনি নষ্ট হওয়া বোঝেন। কিন্তু এগুলোর আরও কিছু রোগ আছে। যেগুলোতে শরীরের প্রোটিন চলে যায়, সেসব ক্ষেত্রে শরীর ফুলে যেতে পারে। এজন্য পায়ে পানি জমলে ও প্রেসার বৃদ্ধি পেলে একজন কিডনি বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে।
কিডনির রোগগুলো খুব ভালো নয়। এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণত দেখা যায়, চিকিৎসায় ৩০-৫০ ভাগ রোগী ভালো থাকেন। অনেকেই ভালো থাকেন না। অনেকেই চিকিৎসা না নিলে কিডনিই নষ্ট হয়ে যায়।
কিডনি রোগের ক্ষেত্রে অনেকেই বায়োসপি না করে চিকিৎসা করাতে চান। তবে বায়োসপি করে চিকিৎসা নেওয়া অনেক ভালো। অনেক সময় ১০-১২ বছরের বাচ্চাদের পা বা শরীর ফুলে যায়। এ নিয়ে মায়েরা অনেক চিন্তা করেন। তবে সাধারণত বাচ্চাদের বায়োসপি করা হয় না। বাচ্চারা একটু বড় হলে বায়োসপি করা হয়।