দেশে করোনার টিকা দেয়ার স্থান নির্ধারণ

0
805
Spread the love

দেশের জনগোষ্ঠীকে ১৮ ভাগে ভাগ করে টিকা দেয়া হবে * যেতে হবে উপজেলা, জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে

কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তায় ভ্যাকসিন বা টিকা প্রদান গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য টিকাদানে একটি অগ্রাধিকার তালিকার রূপরেখা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে।

তালিকায় দেশের কোন জনগোষ্ঠীকে কোথায় গিয়ে টিকা নিতে হবে, সেই বিষয়টিও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। অর্থাৎ, স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। যারা টিকা গ্রহণ করবেন, তাদের এ সংক্রান্ত একটি কার্ডও দেয়া হবে।

তালিকায় দেখা গেছে, কোভিড হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসাকর্মী থেকে শুরু করে আমলা, বিচারক, জনপ্রতিনিধি, ব্যাংক কর্মকর্তা, ধর্মীয় প্রতিনিধি, রোগপ্রতিরোধহীন জনগোষ্ঠীসহ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ১৮ ভাগে ভাগ করে টিকাদানের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে টিকাগ্রহীতাদের একটি বড় অংশকেই যেতে হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে। এছাড়া মেডিকেল কলেজ এবং বিশেষায়িত হাসপাতালেও হবে টিকাদানের ব্যবস্থা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, অনুমোদন ও সিএসএসডিতে পঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রশিক্ষণ সহায়িকা প্রণয়নের কাজ চলছে, যা ২৭ ডিসেম্বর শেষ হবে।

এগুলো ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপা হবে এবং যারা টিকা দেবেন, তাদের প্রশিক্ষণ ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।

পরিকল্পনার এক নম্বরে রাখা হয়েছে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরাসরি সম্পৃক্ত সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের (চিকিৎসক, সেবিকা, মিডওয়াইফ ও প্যাথোলজি ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ফিজিওথেরাপিস্ট, প্রচলিত ও সম্পূরক চিকিৎসাকর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালক)।

টিকা নিতে তাদের যেতে হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর বা জেনারেল হাসপাতালে। এছাড়া সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গিয়েও তারা টিকা নিতে পারবেন।

তালিকার দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছেন কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরাসরি সম্পৃক্ত সব বেসরকারি ও স্বতন্ত্র স্বাস্থ্যকর্মীরা (চিকিৎসক, সেবিকা, মিডওয়াইফ ও প্যাথোলজি ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ফিজিওথেরাপিস্ট, প্রচলিত ও সম্পূরক চিকিৎসাকর্মী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালক)। তারা টিকা নেবেন ওই পাঁচটি স্থান এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

তালিকার তৃতীয় ধাপে রয়েছেন কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সব সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা কর্মীরা (স্বাস্থ্য প্রশাসন, ব্যবস্থাপণার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব কর্মী, করণিক, শিল্প ও বাণিজ্য কর্মী, ধোপা ও রন্ধন কর্মী, গাড়িচালক)। এদের টিকা নেয়ার স্থান বেসরকারি ও স্বতন্ত্র স্বাস্থ্যকর্মীদের মতোই।

টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে চতুর্থ ধাপে রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধরা। টিকা নিতে তাদের যেতে হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর বা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।

তালিকার পাঁচ নম্বরে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, ট্রাফিক পুলিশ, আনসার, ভিডিপি। এরা টিকা নেবেন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচ ও পুলিশ হাসপাতালে।

পরিকল্পনার ষষ্ঠ ধাপে আছেন দেশের প্রতিরক্ষা কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী ও বার্ডার গার্ড, কোস্টগার্ড ও প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যরা। তারাও টিকা নেবেন সিএমএইচ ও পুলিশ হাসপাতালে।

পরিকল্পনার সপ্তম ধাপে আছেন রাষ্ট্রপরিচালনার কাজে অপরিহার্য তথা মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, বিচারিক ও প্রশাসনিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এই জনগোষ্ঠীকে টিকা পেতে যেতে হবে সচিবালয় ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর ও জেনারেল হাসপাতালে।

তালিকার অষ্টম ধাপে আছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। টিকা পেতে তাদের যেতে হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর বা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

পরিকল্পনার নবম ধাপে রয়েছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। এই অংশে থাকছেন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য পর্যন্ত।

টিকা পেতে তাদের যেতে হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর ও জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও সংসদ সচিবালয় ক্লিনিকে।

তালিকার দশম স্তরে রাখা হয়েছে জনসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা কর্মীরা। তারা টিকা নেবেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর ও জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, সরকারি আউটডোর ডিসপেনসারি ও সিটি কর্পোরেশন হাসপাতালে।

তালিকার একাদশ ধাপে রয়েছেন ধর্মীয় প্রতিনিধিরা। তারা টিকা নেবেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর ও জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে। তালিকার দ্বাদশ পর্যায়ে আছেন মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। টিকা পেতে তাদের ওই পাঁচ স্থানেই যেতে হবে।

তালিকার ত্রয়োদশ অবস্থানে আছেন জরুরি বিদ্যুৎ পানি গ্যাস সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা টিকা নেবেন ওই পাঁচ স্থান এবং সরকারি আউটডোর ডিসপেনসারি, সিটি কর্পোরেশন হাসপাতালে।

চর্তুদশ অবস্থনে থাকা জল, স্থল ও বিমানবন্দরগুলোয় কর্মরত ব্যক্তিরা টিকা নেবেন বন্দর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা সদর ও জেনারেল হাসপাতালে।

এছাড়া ১৫, ১৬, ১৭তম অবস্থানে রয়েছেন যথাক্রমে জেলা ও উপজেলায় আবশ্যকীয় জনসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী (যক্ষ্মা, এইডস, ক্যান্সার)।

টিকা পেতে এদের যেতে হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর বা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।

তালিকার শেষ ধাপে অর্থাৎ ১৮তম ধাপে রয়েছেন বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার জনগোষ্ঠী ক্যাম্পে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা। তারা ক্যাম্প ক্লিনিকেই টিকা নিতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, টিকাদান, টিকা-পরিবর্তী বিরূপ প্রতিক্রিয়া, টিকা ও লজিস্টিক সামগ্রী বণ্টন বিষয়ে ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। এসব বিষয়ে এটুআই প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে