নারী-পুরুষের সমস্যা বন্ধ্যত্ব

0
270
doctor explaining diagnosis to her female patient
Spread the love

নারী-পুরুষের ও সমান সমস্যা এই বন্ধ্যত্ব। তবে পুরুষের বন্ধ্যত্ব বা ইনফার্টিলিটির প্রায় ৩৫ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতায় সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। তাই বিবাহের পর যদি সন্তান না হয়, তাহলে নারীর পাশাপাশি পুরুষেরও উচিত নিজের সমস্যা শনাক্ত করা এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।

বন্ধ্যতা কী?
স্বাভাবিকভাবে এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে স্বামী-স্ত্রীর কোন প্রকার গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা ছাড়া শারীরিক মেলামেশা করার পরও যদি সন্তান ধারণে ব্যর্থ হন তাহলে এটিই বন্ধ্যতা বা ইনফার্টিলিটি। আর পুরুষের বন্ধ্যত্ব তখনই বলা হয় যখন কোন দম্পতির মধ্যে স্ত্রীর সন্তান ধারণের সকল সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পুরুষের জনন্তান্ত্রিক সমস্যার কারণে স্ত্রীকে মাতৃত্বের স্বাদ দিতে বা কনসিভ করতে ব্যর্থ হন।

লক্ষণসমূহ
* বীর্য কমে যাওয়া বা স্বল্প পরিমাণে বীর্যপাত
* দৈহিক মেলামেশায় অনীহা
* টেস্টিস বা অন্ডকোষ ফুলে যাওয়া, ব্যথা, টিউমার বা দলা জাতীয় কিছুর অস্তিত দেখা দেয়া।
* অস্বাভাবিক স্তন বৃদ্ধি বা গাইনোকোমাস্টিয়া
* পরীক্ষায় প্রতি এমএল সিমেনে ১৫ লাখের কম বা প্রতি বীর্যপাতে ৩৯ লাখের কম স্পার্ম কাউন্ট

বন্ধ্যত্বের কারণসমূহ
মেল ইনফার্টিলিটি অলিগোস্পার্মিয়া- শুক্রাণু কম, গতি কম। সিমেন এনালাইসিস করলে জানা যায় এর প্রধান কারণ। এছাড়া মানসিক চাপ, শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া ও জিনগত বা বংশগত এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়।

১) বংশগত কিছু রোগের কারণ। যেমনÑ সিস্টিক ফাইব্রোসিস, ক্লিয়েনফেল্টার সিন্ড্রোম, থ্যালাসেমিয়া, টাইপ-১ ডায়াবেটিস ইত্যাদি।

২) অতিরিক্ত ধূমপান বা জর্দা, গুল সেবন। বেশি বেশি জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস।
৩) নেশা জাতীয় দ্রব্যে আসক্তি। যেমনÑ হেরোইন, কোকেইন, ইয়াবা, গাঁজা, মদ্যপান ইত্যাদি।
৪) অতিরিক্ত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন।
যারা এখন জিম করেন এবং বডি বিল্ডিংয়ের জন্য ইনজেক্টেবল স্টেরয়েড ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্ব তৈরি হতে পারে।
৫) এছাড়াও অতিরিক্ত এংজাইটি বা এ্যান্টি ডিপ্রেশনের ওষুধ সেবন, ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ সেবনেও স্পার্ম কাউন্ট কমে যায়।
৬) পেশাগত বিভিন্ন কারণ। যেমন- কাজের তাগিদে প্রতিদিন বা নিয়মিত এক্স-রে বা রেডিয়েশনের সামনে থাকা, লেদ বা অন্যান্য ভারি ধাতুর কারখানায় কাজ করা, বিভিন্ন রকম বিষাক্ত কেমিক্যাল বা সার কারখানায় কাজ করা।
৭) অন্ডকোষ বা টেস্টিসের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্পার্ম প্রোডাকশন কমে যায়। অনেকেই আছেন যারা তলপেটের ওপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করেন এতে টেস্টিসের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
৮) বিভিন্ন মেডিক্যাল কন্ডিশন। যেমনÑ টেস্টিকুলার টিউমার, হরমোনাল ইমব্যালেন্স, ক্রোমোজোমাল ডিফেক্ট, ইনফেকশন, জন্মগত জননাঙ্গের ত্রুটি, ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা ধ্বজভঙ্গ ইত্যাদি কারণেও ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যত্ব দেখা দিতে পারে।
৯) ট্রমার কারণে টেস্টিস অথবা জননাঙ্গ আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইনফার্টিলিটি দেখা দিতে পারে।
রোগ নির্ণয়
যেসব পরীক্ষার মাধ্যমে পুরুষদের ইনফার্টিলিটি নির্ণয় করা হয়। যেমন-
১) সিমেন এ্যানালাইসিস- এই পরীক্ষার মাধ্যমে স্পার্ম কাউন্ট, স্পার্ম এর গুণগত মান ইত্যাদি বোঝা যায়।
২) টেস্টিকুলার বায়োপসি- সিমেন এ্যানালাইসিসে স্পার্ম কাউন্ট শূন্য বা কম থাকলে তখন এই পরীক্ষা করা হয়।
৩) হরমোনাল প্রোফাইল- স্পার্ম প্রোডাকশন এ বিভিন্ন রকম হরমোন দরকার। এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন হরমোনের সঠিক মাত্রা বের করা যায়। এ ছাড়াও বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেও জননাঙ্গের অস্বাভাবিকতা নির্ণয় করা যায়।
বন্ধ্যত্ব প্রতিরোধে উপকারী কিছু পথ্য-
মেথি দানা, ফ্লাক্সাসিড, হলুদ, কলা, রসুন, মাছ, কডলিভার অয়েল, পনির ইত্যাদি। দেখা যায় প্রায় ২৫ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষদের বন্ধ্যত্বের সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার এই রোগটি ঘরোয়া উপায়ে নিরাময় বা চিকিৎসা করাও সম্ভব নয়। তাই সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা এ রোগের জন্য প্রয়োজন। আধুনিক এলোপ্যাথিক ও রিজেনারেটিভ চিকিৎসার সঙ্গে পুরুষের বন্ধ্যত্ব নিরসনে হোমিও চিকিৎসায় বন্ধ্যত্ব থেকে আরোগ্য বা পরিত্রাণ পাওয়া যায়। কারণ হোমিওপ্যাথি মেডিসিন রোগের অবস্থা বুঝে ওষুধ খেতে দেয়া হয়। বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় বহু পুরুষ এ সমস্যা থেকে সমাধান পেয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সঠিক নিয়মে চলা জরুরী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে