পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম

0
1027
Spread the love

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম হরমোনজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা যা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে আক্রান্ত করেছে। এটি প্রধানত বালিকা ও মহিলাদের প্রজনন সময় হয়ে থাকে (১৫-৪৪ বছর) সংখ্যার কিছুটা তারতম্য হলেও ১৫ বছর থেকে বয়স ৪৫ বছরের দিকে যত আগাতে থাকে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের রোগীর সংখ্যা তত বৃদ্ধি পেতে থাকে (২.২-২৬.৭) %। পৃথিবীর প্রত্যেকটি পলিসিস্টিক ওভারি রোগীর সংখ্যা আলাদ আলাদা রকম এবং এ সংখ্যা রক্তক্ষরণের ক্রাইটেরিয়ার কারণে আলাদা হতে পারে। ইউরোপের দেশগুলোর প্রজননক্ষম মহিলাদের ১৫-২০ শতাংশ এ সমস্যায় আক্রান্ত। আমেরিকার দেশগুলোতে এর সংখ্যা ২০ শতাংশের কাছাকাছি। এশিয়ার দেশগুলোতে এ সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হয়। তবে বাংলাদেশের ২৫ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে ধরে নেওয়া হয়। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম মূলতঃ নারী দেহে এন্ড্রোজেন(পুরুষ যৌন হরমন)- এর অধিক্যের কারণে সংগঠিত শারীরিক সমস্যা। এ কারণে এন্ড্রোজেন হরমোনের প্রভাবে বিভিন্ন রকম লক্ষণ দেখা দিতে থাকে, যেমন- ক) অনিয়মিত মাসিক, খ) অতিরিক্ত রক্তস্রাব, গ) মুখে ও শরীরে অত্যাধিক লোম, ঘ) ব্রণ মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে। আরোও কিছু শারীরিক সমস্যা এর সাথে থাকতে পারে- তল পেটে ব্যাথা, মখমলের মত কালো ত্বক( ঘাড়, বগল ইত্যাদি জায়গায়) ও বন্ধ্যাত্ব। এ রোগীদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার ঝুকি অনেক বেড়ে যায়। এদের অনেকেই দৈহিক স্থলতায় আক্রান্ত হয়, নাক ডাকা ও ঘুমের মাঝে হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, হৃদরোগের ঝুকি বেড়ে যাওয়া, মানষিক ভারসাম্যহীন্তা ও জ্বরায়ু ক্যান্সারের ঝুকি বৃদ্ধি পেতে পারে। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম একটি জীনগত ত্রুটি ও পরিবেশগত ত্রুটির সমন্বিত ফল। জীন গত ত্রুটি আছে এমন কিশোরির দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, খুব কম শ্রম ও ঝুকিপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি এরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম দেখা দেয় যখন, ডিম্বাশয় অতিরিক্ত পরিমাণ টেস্টোস্টেরন হরমণ তৈরি করতে উদ্দীপ্ত হয়। যার পেছনে পিটুইটারি গ্রন্থি কর্তৃক অতিরিক্ত এলএইস(খঐ) নিঃস্বরণ ও দেহে ইনসুলিন রেজিস্ট্রেন্স এর উপস্থিতি। পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম নাম হওয়ার প্রধান কারণটি হল এ রোগীদের ডিম্বাশয়ের বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন আকারের, বিভিন্ন সংখ্যার লিস্ট থাকতে পারে কিন্তু এটি পরিষ্কারভাবে একটি হরমোনজনিত সমস্যা। অধিকাংশ রোগীর দেহে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স থাকে এবং তারা স্থূলকায় হয়।

লক্ষণঃ
১। অনিয়মিত মাসিকঃ এক্ষেত্রে বেশি দিন অন্তর ঋতুস্রাব এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অল্পমাত্রায় ঋতুস্রাব, তবে কারো কারো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব। কিন্তু মাসের পর মাস ঋতুস্রাব বন্ধ থাকা অস্বাভাবিক নয়। এ সমস্যা যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে।
২। বন্ধ্যাত্বঃ অধিকাংশ নারীই সন্তান দানে ব্যর্থ হয়েছেন মূলত পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের কারণে।
৩। পুরুষালি হরমন বৃদ্ধিঃ অতিরিক্ত এসব হরমনের প্রভাবে শরীরে পুরুষের মত লোম দেখা দিতে পারে, ব্রণ ও পুরুষালী টাকসহ ইত্যাদি। প্রতি ৪ জনের ৩ জনেরই এটা প্রকাশ পায়।

৪। মেটাবলিক সিন্ড্রোমঃ এতে ইন্সুলিন রেজিস্ট্রেন্স এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে- ক্রমশঃ ওজন বৃদ্ধি, রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধি, ঘাড় ও বগলে নরম কালো ত্বক, অস্বাভাবিক কোলেস্টেরল, স্মৃতিশক্তি হ্রাস ইত্যাদি।
রোগ শনাক্তকরণঃ

১। অতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমনের উপস্থিতি
২। ডিম্বাশয়ে সিস্ট
৩। অনিয়মিত
পরীক্ষা-নীরিক্ষাঃ
-সিরাম টেস্টোস্টেরন, এলিস, এফএসএইস
-পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম
-ওজিটিটি

চিকিৎসাঃ
-জীবন-যাত্রা ব্যবস্থাপনা
ঔষধঃ
-জন্ম নিয়ন্ত্রক পীল
-মেটফরমিন-
-অবাঞ্চিত লোম দূর করবার ক্রীম
-প্রজনন সম্ভাবনা বৃদ্ধির ওষুধ

পলিসিস্টিন ওভারি সিন্ড্রোম এ লক্ষণ গুলো সহজেই প্রকাশ পায় না বা অনেকেই সংকোচ বোধের কারনে চিকিৎসা করাতে বা প্রকাশ করতে দেরি করেন ফলে রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করে ও স্বাস্থ্য ঝুকি সৃষ্টি করে। তাই প্রজননক্ষম সকল নারীকে এ রোগের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হরমন বিশেষজ্ঞ এর শরণাপন্ন হতে হবে।

লেখক: ডা. শাহজাদা সেলিম
সহকারী অধ্যাপক,
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
হরমোন ও ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে