প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে কফি, যা বলছেন চিকিৎসকরা

0
3
Coffee cup on a wooden table.
Spread the love

অফিসে প্রচুর কাজের চাপ। আপনি এক কাপ গরম কফি খেয়ে তরতাজা হয়ে কাজে হাত দিলেন। বন্ধুবান্ধবদের আড্ডায় মুচমুচে স্ন্যাক্স সহযোগে গরম কফির পেয়ালা হাতে উঠলে আড্ডাটা আরও জমজমাট হয়ে ওঠে। সঙ্গীকে নিয়ে সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়ে কোথাও বসে এক কাপ কোল্ড কফি না খেলে কী আর হয়। অনেকে আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতে কফির মগ তুলে না নিলে দিনটাই ভালো যায় না। সেই সকাল থেকে রাত, আনন্দে হোক কিংবা ক্লান্তিতে— কফি আছে থাকা চাই। কিন্তু আপনার ঘন ঘন কফি খাওয়ার যে অভ্যাস, তা যে প্রজনন ক্ষমতার ওপরে প্রভাব ফেলে,সে কথা কি আপনি জানেন? হয়তো তা আপনি জানেন না।

দোষ আপনার নয়; দোষটা হচ্ছে কফিতে থাকা ‘ক্যাফিন’ নামক উপাদানটির। ক্যাফিনকে বলা হয় ‘স্টিমুল্যান্ট’, যা শক্তিবর্ধক। কেবল কফিতে নয়, চা, অ্যালকোহল, নরম পানীয়, চকোলেটসহ বেশ কিছু খাবারেও ক্যাফিন থাকে। এই উপাদানটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায় এবং কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় বলেও দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন গবেষণায়। তবে এর ক্ষতিকর দিকটি সম্পর্কে জানা দরকার। ক্যাফিন বেশি পরিমাণে শরীরে ঢুকলে নানাভাবে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। প্রজনন ক্ষমতার ওপরে বড় প্রভাব পড়ে। পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাশয় ও নারীর ক্ষেত্রে জরায়ুর উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে ক্যাফিন। আর তাই প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে কফি। আর এ বিষয়ে যা বললেন চিকিৎসকরা।

এ বিষয়ে মেডিসিন চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, ক্যাফিন যেমন ভালো, তেমনই ক্ষতিকর। এক কাপ কফিতে প্রায় ৭০ থেকে ১৪০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন থাকে। কফি খাওয়ার সময়ে এ পরিমাণটা ভুললে চলবে না। আর এক কাপ কফিতে কতটা পরিমাণ কফি দিচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করছে সব। সেই হিসাবে দিনে তিন কাপের বেশি কফি না খাওয়াই ভালো। চা-ও তাই। দিনে দুই থেকে তিন কাপ চা খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু সাত থেকে আট কাপ ছাড়িয়ে গেলেই বিপদ।

আরও জেনে নিন, আপনার শরীরে ক্যাফিন কতটা ক্ষতিকর—

মানুষের শরীরে দুই রকম সিস্টেম আছে— সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক। সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমে অত্যধিক প্রদাহ তৈরি হলে তখন রক্তচাপ বেড়ে যায়, শ্বাসের গতি বাড়ে, নাড়ির গতি বাড়ে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।

আবার ঠিক উল্টোটা হয় প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের ক্ষেত্রে। ক্যাফিন সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলোকেই সবচেয়ে আগে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমনটিই বলছেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়।  তিনি বলেন, যারা প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় কাপ বা তার বেশি কফি খান, তাদের শরীরে এত বেশি ক্যাফিন ঢোকে, যা সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমকে ‘স্টিমুলেট’ করে। অর্থাৎ উদ্দীপনা বাড়ায়। এতে শরীরের তাপমাত্রাও বাড়ে, যার প্রভাব পড়ে জনন অঙ্গের ওপরে। হরমোনের তারতম্য দেখা দেয়, শুক্রাশয়ে শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়া ও জরায়ুতে ডিম্বাণু তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নষ্ট হতে শুরু করে।

আর দিনে ২০০ মিলিগ্রামের মতো ক্যাফিন আপনার শরীর নিতে পারে। কিন্তু দৈনিক ক্যাফিনের মাত্রা যদি ৩০০ মিলিগ্রাম ছাড়িয়ে যায়, তা হলে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যেতে থাকে। নারীর ইস্ট্রোজেন নামক যৌন হরমোনেরই একটি রূপ এস্ট্রাডিওল হরমোন ও প্রজেস্টেরনের ক্ষরণ এলোমেলো হয়ে যায়।

মল্লিনাথ বলেন, এই দুই হরমোনের তারতম্য দেখা দিলে মাসিক ঋতুচক্রের প্রক্রিয়াও অনিয়মিত হতে শুরু করে। ফলে ডিম্বাণু নিঃসরণের প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে  উর্বরতা কমতে শুরু করে।

পুরুষদের ক্ষেত্রেও টেস্টোস্টেরন ক্ষরণের প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে দিতে পারে অতিরিক্ত ক্যাফিন। এখানে আরও একটি বিষয় আছে— শুক্রাশয়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে কম থাকে। কারণ শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য শুক্রাশয়ের নিম্ন তাপমাত্রাই জরুরি। আর যদি কোনো কারণে শুক্রাশয়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তা হলে দুই রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে— ১. শুক্রাণু উৎপাদনের প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ২. ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’-এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্যাফিন যদি বেশি পরিমাণে শরীরে জমা হতে থাকে, তা হলে এই দুই সমস্যাই বড় হয়ে দেখা দেবে। শুক্রাণুর ঘনত্ব ও গুণমানও কমতে থাকবে। এর থেকে বন্ধ্যত্বের সমস্যাও আসতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে