অনেক সময় অপারেশন করার প্রয়োজন হয়- যদি চাকার সাইজ বড় হতে থাকে বা সময়ের সঙ্গে মিশিয়ে না যায়। যদি ব্যথা বা অস্বস্তিভাব থাকে। যদি biopsy তথ্য থেকে Fat Necrosis নিশ্চিত হওয়া না যায়
ফ্যাট নেকরোসিস Traumatic Fat Necrosis নামেও পরিচিত। যাতে সাধারণত আঘাতজনিত কারণে স্তনের Fatty Tissue বা মেদযুক্ত অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে এবং এই আঘাতপ্রাপ্ত অংশটি স্তনে চাকার মতো অনুভূত হয়। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই রোগীরা কোন Accident/Trauma অর্থাৎ আঘাতের পূর্ব-ইতিহাস বলতে পারেন না, ৪০% ক্ষেত্রে রোগী Trauma History দিয়ে থাকেন।
কেন ও কীভাবে হয় : স্তনের স্তন প্রধানত তৈরি হয় Lobules (দুগ্ধ তৈরিকারী গ্রন্থি) এবং Ducts (দুগ্ধনালি)-এর সমন্বয়ে। যা ঘিরে থাকে Fibrous I Fatty tissue (মেদযুক্ত অংশ)। কোনো কারণে এই Fatty tissue আঘাতপ্রাপ্ত হলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বা এই অংশ মারা যেতে পারে, যা Fat Necrosis বলা হয়।
কারণ : Breast Biopsy (স্তনের বাইয়োপসি পরীক্ষা পরবর্তী সময়ে)
Radiotherapy (স্তনের সেক চিকিৎসা)
Breast Surgery (স্তনের শৈল্য চিকিৎসা)
Injury to breast (স্তনে আঘাত লাগা যেমন- Seat belt, accident)
উপসর্গ : এর প্রধান উপসর্গ হলো স্তনে চাকা অনুভূত হওয়া, যা সাধারণত ব্যথাহীন।
তবে অনেক ক্ষেত্রে সঙ্গে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় চাকার উপরি অংশের চামড়া লাল বা কালচে হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে স্তনের চামড়ার টোল দেখা দিতে পারে বা নিপল/স্তনবৃন্ত ভিতরে ঢুকে যেতে পারে। তবে অনেক সময় স্তনের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে Cyst তৈরি হয় যাতে গলানো চর্বি জমে থাকে (Oil Cyst)।
কীভাবে ডায়াগনোসিস করা হয় : উপসর্গ দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থা থেকেই সতর্ক হতে হবে। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় হলে পরবর্তীতে চিকিৎসা কার্যক্রম অনেক সহজ হয়। তাই অবহেলা না করে যখনই স্তনে কোনো চাকা অনুভূত হবে তখন অবশ্যই একজন ব্রেস্ট সার্জন বা জেনারেল সার্জন দিয়ে চেক করানো উচিত। ডাক্তার সাধারণত প্রথমে নিজে স্তন পরীক্ষা করে দেখেন এবং পরবর্তীতে আল্ট্রাসনোগ্রাম বা প্রয়োজনে মেমোগ্রাম করা হয়।
তবে অনেক ক্ষেত্রে স্তন চেক করার সময় বা Ultrasonogram/Mammogram পরীক্ষায় Fat necrosis, রোগটি স্তন ক্যান্সার/Breast Cancer মনে হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই FNAC বা Core biopsy পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হয়, এটি ক্যান্সার কিনা।
চিকিৎসা : Fat Necrosis সাধারণত কোনো বিপজ্জনক অবস্থা নয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই এতে কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, সময়ের সঙ্গে এই চাকা মিলিয়ে যায়। তবে অনেক সময় অপারেশন করার প্রয়োজন হয়- যদি চাকার সাইজ বড় হতে থাকে বা সময়ের সঙ্গে মিশিয়ে না যায়। যদি ব্যথা বা অস্বস্তিভাব থাকে। যদি biopsy তথ্য থেকে Fat Necrosis নিশ্চিত হওয়া না যায়। তাই এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। কারণ প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম। একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, রোগবালাইয়ের ক্ষেত্রে কখনো অবহেলা করা ঠিক নয়। অনেকেই আছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেন, তিনি কি চিকিৎসকের কাছে যাবেন কি যাবেন না। অথচ সিদ্ধান্তহীনতার এ বিষয়গুলো পরবর্তীতে জটিলতা আরও বাড়ায়।
নানা প্রেক্ষাপট ও কখনো কখনো সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে নারী বা পুরুষ যে কেউই স্তন বিষয়ক কোনো আলোচনা করতে অস্বস্তিবোধ করে। একইভাবে নারীদের স্তনে কোনো পরিবর্তন দেখা দিলেও তারা তা গোপন রাখে। এমনকি অনেকেই মা বা স্বামীর কাছেও প্রথমদিকে গোপন রাখার চেষ্টা করে। ফলে একটা পর্যায়ে জটিলতা আরও বেড়ে যায়। তাই আরও সচেতন হতে হবে।
লেখক:
ডা. আফরিন সুলতানা
প্রতিষ্ঠাতা, টোটাল ব্রেস্ট কেয়ার, ধানমন্ডি, ঢাকা