ডায়াবেটিস এমন একটি শারীরিক অবস্থা যা সারা জীবনের জন্যে বয়ে বেড়াতে হয় এবং সারা বিশ্বে এর কারণে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া যে কোন ব্যক্তিই এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। শরীর যখন রক্তের সব চিনিকে (গ্লুকোজ) ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখনই ডায়াবেটিস হয়। এই জটিলতার কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক হতে পারে।
সাধারণত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে তা প্রথম অবস্থাতেই টের পাওয়া কঠিন। রক্ত পরীক্ষা করিয়ে তা বুঝে নিতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। যে কোনো সংক্রামক অসুখের ক্ষেত্রে যত আগে উপস্থিতি টের পাবেন, ততই ভালো। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে তা বেড়ে যাওয়ার উপসর্গগুলোও চেনা জরুরি।
সাধারণত, শরীরের বেশ কিছু লক্ষণের বিষয়ে সজাগ থাকলেই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়।
কোন কোন উপসর্গ দেখলেই সতর্ক হবেন
১) শীতের আমেজেও অতিরিক্ত পানির পিপাসায় জিহ্ববা শুকিয়ে আসছে ঘন ঘন? এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে এই সমস্যা যে, রাতেও বার বার ঘুম ভাঙে পানির প্রয়োজনে? শরীরে হঠাৎ এই সমস্যা দেখলে তা হতেই পারে ডায়াবেটিসের লক্ষণ। এই অসুখে শরীরের কোষ থেকে ফ্লুইড নেয় কিডনি। ফলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা যায়।
২) ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে দৃষ্টিশক্তিতে। ঘোলাটে দেখা বা কোনও লেখার লাইন ভুল দেখা বা ভুল পড়ার সমস্যা তৈরি হলে সচেতন হতে হবে।
৩) রক্তের অতিরিক্ত শর্করা বের করে দেওয়ার জন্য শারীরিক প্রক্রিয়া কিডনিতে চাপ দেয়। ফলে অনেকের ক্ষেত্রে ঘন ঘন প্রস্রাব পায়। রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়ার কারণে ইস্ট সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ে।
৪) হাত-পায়ে ঝিঁঝি ধরা ও সঙ্গে তা অবশ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আরও নানা কারণে এমনটা ঘটতেই পারে। তবে ডায়াবিটিস দানা বাঁধলেও এমনটা হয়।
৫) ব্যায়াম বা শরীরচর্চা না করেই কি ওজন হ্রাস পেয়েছে অনেকটা? আবার অনেকের ক্ষেত্রে অত্যধিক ওজন বেড়েও যায়। তাই হঠাৎ ওজন হ্রাস পেলে বা বৃদ্ধি পেলে সতর্ক হোন। শরীরের কোনও অংশে ঘা শুকোতে দেরি হচ্ছে? তা হলেও অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ দিন।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াবেন যেভাবে
১) সবার আগে ডায়েটে নজর রাখতে হবে। ফল, শাকসবজি বেশি করে ডায়েটে রাখতে হবে। বাজারের ভাজাপোড়া, প্রক্রিয়াজাত মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
২) নিয়ম করে শরীরচর্চা করতে হবে। শরীরচর্চার সময় না হলেও দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা জরুরি।
) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
৪) নিয়ম করে ছয় মাস অন্তর অন্তর রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।
৫) ঘুমের সঙ্গে কোনো আপস নয়। দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি।