তিন বছর বয়সের পর কোনো শিশুরই বিছানায় প্রস্রাব করার কথা নয়। তবে ছেলেশিশুর ক্ষেত্রে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত বিষয়টি মেনে নেওয়া যেতে পারে। মেয়েশিশুদের অবশ্য তিন বছর বয়সেই বিছানায় প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার কথা। নির্ধারিত বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরও শিশু বিছানায় প্রস্রাব করতে থাকলে শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
কেন হয়
শিশুর প্রস্রাব–পায়খানা করার অভ্যাস গড়ে ওঠে শিশুকাল থেকে দেওয়া প্রশিক্ষণের ওপর। অনেক মা ৯-১০ মাস বয়স থেকে মুখে শিস দেওয়ার মতো আওয়াজ করে শিশুকে সময়মতো প্রস্রাব করান। নির্দিষ্ট সময় পরপর পটিতে বা কমোডে বসিয়ে প্রস্রাব করানোর অভ্যাসও করেন অনেকে। শিশুর ৯-১৫ মাস বয়সের মধ্যে এই প্রশিক্ষণ শুরু করা উচিত। পরবর্তী সময়ে এই প্রশিক্ষণ বেশ সহায়ক হয়। তবে অনেক মা-বাবাই ব্যাপারটিকে অবহেলা করেন। শিশু যখন যেখানে খুশি প্রস্রাব করছে দেখেও উদাসীন থাকায় প্রশিক্ষণ ঠিকমতো হয় না। এ ধরনের শিশুরা পরবর্তী সময়ে অনেক দিন ধরে বিছানায় প্রস্রাব করে।
শিশুর মানসিক অশান্তি, অনিরাপত্তাবোধ, নতুন জায়গা, মা-বাবার অনুপস্থিতি, বিছানা পরিবর্তন, হতাশা প্রভৃতি কারণে বিছানা ভেজানোর মতো ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে অনেক সময় সুফল পাওয়া যায়।
কিডনি ও প্রস্রাবের পুরো ব্যবস্থার কোথাও ত্রুটি থাকলেও রাতে বিছানায় প্রস্রাব করতে পারে শিশু। বিশেষত মূত্রনালির সংক্রমণ, বহুমূত্র রোগের কারণে যেমন ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস ও মেলিটাস, ক্রনিক রেনাল ফেইলিওর প্রভৃতি কারণে শিশু বিছানা ভেজাতে পারে। এ ছাড়া ঘুমের মধ্যে যেসব শিশুর মলদ্বার চুলকায়, তারাও বিছানায় প্রস্রাব করতে পারে। অনেক সময় মলদ্বারে সুতাকৃমি জড়ো হওয়ায় এমনটা হয়ে থাকে। কারণ যা-ই হোক না কেন, চিকিৎসকের পরামর্শে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
যা করবেন
- সন্ধ্যার পর জলীয় খাবার কম খাওয়ানো বা খেতে না চাইলে না দেওয়া।
- রাতে ঘুমানোর আগে এবং প্রয়োজনে ভোররাতে আরেকবার উঠিয়ে শিশুকে প্রস্রাব করানো।
- সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শিশু বিছানায় প্রস্রাব করলে তা নিয়ে তাকে কোনো রকম বকাঝকা বা তিরস্কার করা যাবে না। এতে শিশু উদ্বিগ্ন ও বিব্রত হবে, সমস্যা বাড়বে।
- চাইলে ভিন্ন রকম উদ্যোগ নিতে পারেন। শিশুকে একটি ডায়রি দিন। সপ্তাহের যে দিন সে বিছানায় প্রস্রাব করবে না, সে দিনটির তারিখে একটা তারকা চিহ্ন দিয়ে নির্দিষ্ট করতে বলুন তাকে। এরপর শিশুকে বলতে হবে, সপ্তাহে কয়েকটি তারকা চিহ্ন পেলে সে তার ইচ্ছানুযায়ী একটা পুরস্কার পাবে। এভাবে সে-ই সংগ্রাম করতে চাইবে ও নিজের সমস্যার সমাধানে মনোযোগী হবে। এই পদ্ধতিতে প্রায় ৭০-৮০ ভাগ ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়।
- খুব অল্প ক্ষেত্রেই এ সমস্যা সমাধানে ওষুধের আশ্রয় নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে শিশুবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল