ব্রেস্ট ক্যান্সার: বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

0
32
Spread the love

বর্তমানে ক্যান্সার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে সারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশে একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে, যার মধ্যে ৯ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বাংলাদেশে, প্রতি বছর প্রায় ১৫০,০০০ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, এবং এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী দেরিতে চিকিৎসা নেওয়ার কারণে প্রাণ হারান। ব্রেস্ট ক্যান্সার, সার্ভিক্যাল ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, এবং গলব্লাডার ক্যান্সার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আজকে আমরা জানবো বেস্ট ক্যান্সারের আদ্যপ্রান্ত।

ব্রেস্ট ক্যান্সার মানেই সবকিছু শেষ এমন নয়, যদি আমরা সময়মতো পদক্ষেপ নিই তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর কবল থেকে আবার সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করা সম্ভব। সচেতনতা, ভালো চিকিৎসা, এবং সাহসী মনোভাবই পারে আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করতে।

১.বাংলাদেশের পরিস্থিতি:

ব্রেস্ট ক্যান্সার বাংলাদেশের নারীদের জন্য একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ২৫,০০০ নারী এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, এবং তাদের মধ্যে ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ নারী হারাচ্ছেন তাদের জীবন। এটি শুধুমাত্র পরিসংখ্যান নয়, প্রতিটি সংখ্যার পেছনে আছে একজন মেয়ে, একজন মা, একজন বোন—যাদের পরিবার, স্বপ্ন এবং জীবন ছিল। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এই রোগ নিয়ে আরও বেশি চ্যালেঞ্জ দেখা যায়। এখানে সচেতনতার অভাব, পরীক্ষা করার সুযোগের কমতি, এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাওয়া অনেক কঠিন।

২.মূল ঝুঁকি :

* বয়স বৃদ্ধি
* পারিবারিক ইতিহাস (জেনেটিক ফ্যাক্টর)
* হরমোনজনিত পরিবর্তন
* অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা (ওজনাধিক্য, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস)

৩. লক্ষণসমূহ:

* স্তনে চাকা বা শক্তি অনুভব করা
* স্তনের আকার বা আকারে পরিবর্তন
* ত্বকের পৃষ্ঠে অস্বাভাবিক পরিবর্তন
* নিপল থেকে রস বা রক্তপাত

৪. বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ:

* অনেক নারী আর্থিক সীমাবদ্ধতা, সামাজিক ট্যাবু এবং লজ্জার কারণে চিকিৎসা নিতে পিছিয়ে থাকেন।
* রোগটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেরিতে শনাক্ত হয়, ফলে মৃত্যু হার বেশি।

৫. বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট:

* বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ২৭ লাখ নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।
* প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ নারী মারা যান।

৬. বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিস্থিতি:

* উন্নত দেশগুলোতে (যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া) সচেতনতা ও স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে নিরাময়ের হার ৯০% পর্যন্ত।
* উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, বিশেষত বাংলাদেশে, ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রায়ই দেরিতে ধরা পড়ে, যার ফলে মৃত্যু হার বেশি।

৭. প্রতিরোধ ও সচেতনতা:

* প্রাথমিক স্ক্রিনিং ও পরীক্ষা (ম্যামোগ্রাম) ক্যান্সার নিরাময়ের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখে।
* সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে আরও বেশি সচেতনতা প্রচারণা এবং স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম প্রয়োজন।

৮. আমাদের করণীয়:

• প্রতিটি নারীকে নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করাতে উৎসাহিত করতে হবে।
• সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর উচিত সুলভে স্ক্রিনিং সুবিধা প্রদান করা।
• জনসচেতনতামূলক সেমিনার, ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা যেতে পারে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার এখন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, এটি একটি জাতীয় ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা। সচেতনতা বৃদ্ধি, সময়মতো পরীক্ষা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে আমরা এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। বিশ্বব্যাপী যেমন ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে অগ্রগতি হচ্ছে, তেমনই বাংলাদেশকেও এই পথে আরও অগ্রসর হতে হবে; সবাই মিলে যেন অগ্রযাত্রায় শামিল হই এই আমাদের প্রত্যাশা।

সুত্রঃ স্বাস্থ্যকথা ডেস্ক ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে