যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন হিসেবে ফাইজারের পর এবার অনুমোদন পাচ্ছে মডার্নার কভিড ভ্যাকসিন। এদিকে রাশিয়ার তরফ থেকে বলা হয়েছে, তাদের তৈরি স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিন অন্যান্য সব ভ্যাকসিনের চেয়ে সবচেয়ে বেশি দিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার। টানা দুই বছর পর্যন্ত এই প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে। কিন্তু অন্যান্য ভ্যাকসিন মাত্র দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ফাইজার টিকার অনুমোদন দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। এবার মডার্নার টিকার অনুমোদন দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও দেশটিতে এরই মধ্যে ফাইজার টিকারও ব্যবহার শুরু হয়েছে। এখন দ্বিতীয় টিকা হিসেবে শিগগিরই মডার্নার ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জানিয়েছে, মডার্নার টিকা নিরাপদ। এ টিকা নিয়ে এফডিএর ৫৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষায় এটি ৯৪.১ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। মডার্না বলেছে, অনুমোদন পেলে তারা বিপুল পরিমাণ টিকা তৈরি করবে। খবরে আরও বলা হয়, ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ করতে হয় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এত কম তাপমাত্রায় এটি সংরক্ষণ ও স্থানান্তর বেশ কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। তবে মডার্নার টিকার একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এর সংরক্ষণ পদ্ধতি। এর সংরক্ষণ ও স্থানান্তর তুলনামূলক সহজ। কেননা এটি সংক্ষণ করতে হয় মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।
স্পুটনিকের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুই বছর : রাশিয়ার ‘স্পুটনিক ভি’-র প্রস্তুতকারক সংস্থা দ্য গামালেয়া রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছে, তাদের তৈরি ভ্যাকসিন শুধু দামেই সস্তা নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায়ও সর্বোচ্চ। এ টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় থাকবে দুই বছর। গামালেয়া রিসার্চ সেন্টারের প্রধান আলেকজান্ডার গিনস্টবার্গকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা উইয়ন জানিয়েছে, ইবোলা টিকার ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই একই পদ্ধতিতে এই টিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে অন্ততপক্ষে দুই বছর। রাশিয়াই প্রথম দাবি করে করোনার টিকা আবিষ্কার করেছে তারা। নাম দেয় ‘স্পুটনিক ভি’।
গামালেয়া দাবি করে, তাদেও তৈরি টিকা ৯১ শতাংশ কার্যকরী। তবে এই টিকার কার্যকারিতা যাতে আরও বাড়ে এখন সেদিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে। ভ্যাকসিন প্রয়োগে সৌদি আরবে নাম নিবন্ধন শুরু : অবশেষে করোনা প্রতিরোধে বিজ্ঞানীদের তৈরি ভ্যাকসিন জনগণের মাঝে প্রয়োগের জন্য নাম নিবন্ধন শুরু করেছে সৌদি আরব। গত মঙ্গলবার দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অনলাইনে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলছে। তবে নাগরিক ও বাসিন্দাদের কোন ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, তা জানানো হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়েছে, যে ভ্যাকসিনটি সব ধরনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রমাণে সক্ষম, সেই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।
খবরে বলা হয়, তিন ধাপে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথম ধাপে সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণদের এই টিকা দেওয়া হবে। এদের মধ্যে থাকবেন ৬৫ বছরের বেশি বয়সী স্ট্রোক, অ্যাজমা, ডায়াবেটিস ও কিডনির রোগীরা। দ্বিতীয় ধাপে ৫০ বছরের বেশি বয়সী স্ট্রোক, অ্যাজমা, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সবশেষে যারা এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে চান, তাদের সবাইকেই তা দেওয়া হবে। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, যাদের টিকা দেওয়া হবে তাদের আগেই সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হবে। সিঙ্গাপুরে ফাইজারের টিকা অনুমোদন : যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের পর এবার মার্কিন ও জার্মান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফাইজার-বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকার অনুমোদন দিয়েছে সিঙ্গাপুর। প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের শেষেই তার দেশে পৌঁছাবে টিকার প্রথম চালান। গত সোমবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি জানান, সবকিছু পরিকল্পনা মতো এগোলে আগামী বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের মধ্যেই সিঙ্গাপুরের সব নাগরিক এবং সেখানে দীর্ঘ সময় বসবাসকারীদের বিনামূল্যে টিকা প্রদান সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং জানান, ডিসেম্বরের শেষের দিকে সিঙ্গাপুরের টিকার প্রথম চালান পৌঁছানোর পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যেই অন্য টিকাও পৌঁছানো শুরু করবে। তিনি জানান, সম্মুখ সারির কর্মী, বয়স্ক এবং ঝুঁকিতে থাকা মানুষ আগে টিকা পাবেন। তারপর প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তা টিকা নেবেন বলে জানান তিনি। তিনি এও বলেন, ‘আমিসহ মন্ত্রিসভার সহকর্মী এবং বয়স্করা আগেভাগে টিকা নেব। এর নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বাস তৈরি করতে বিশেষ করে আমার মতো বয়স্কদের আশ্বস্ত করতেই এই টিকা নেব।’