মাস্ক শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের অন্তরায়

0
327
Spread the love

করোনার এই সময়ে মাস্ক একটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের জীবনে। প্রাণঘাতী করোনা থেকে বাঁচতে প্রাথমিক প্রতিরোধ হিসেবে ছোট-বড় সব বয়সের মানুষকেই পরতে হচ্ছে মাস্ক। বয়স্করা মাস্কের সঙ্গে খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারলেও যত সমস্যা হচ্ছে শিশুদের বেলায়। ভাইরাস থেকে দূরে রাখতে বাবা-মা প্রায়ই শিশুদের জোর করে মাস্ক পরাচ্ছেন। স্কুলে মাস্ক, বাইরে খেতে গেলে মাস্ক, বেড়াতে গেলে মাস্ক; এমনকি মাঝেমধ্যে ঘরের ভেতরেও মাস্ক পরতে হচ্ছে শিশুদের। কঠোর এই নিয়মের কারণে করোনা সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা নিশ্চিত হলেও গবেষকরা বলছেন, মাস্ক শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। আর এ সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি।

ইউরোপিয়ান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকের সভাপতি আদামোস হাজিপনায়িস বলেন, বয়স অনুসারে শিশুদের মাস্ক পরানোর আবশ্যিকতার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের মাস্ক পরানো কঠোরভাবে নিষেধ করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরামর্শ- ৫ বছর বা তার কম বয়সের শিশুদের মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। এই বয়সে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের বিকাশের দ্বারপ্রান্তে থাকে। মাস্ক শিশুকে প্রাথমিক সুরক্ষা দিলেও এতে তার মানসিক বিকাশ সরাসরি বাধাগ্রস্ত হয়। দীর্ঘ সময় মাস্ক পরে থাকলে তা শিশুর মনে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং দুঃখবোধ তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া যেসব জায়গায় তারা মাস্ক পরতে অভ্যস্ত নয় সেসব জায়গায় নতুন করে মাস্ক পরার আবশ্যিকতা শিশুদের মনে বিভ্রান্তি ও ভীতিকর অনুভূতির জন্ম দিতে পারে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে শিশুদের সঙ্গে মাস্ক নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে হবে এবং এটি পরার উপকারিতা সহায়ক উপায় অবলম্বন করে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। তবে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মাস্ক পরিধান নিয়ে বয়সভিত্তিক কোনো নির্দেশনা দিয়ে থাকলে ৫ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সী শিশুদের মাস্ক পরানোর ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সরাসরি তত্ত্বাবধান করা উচিত।

যুক্তরাজ্যে স্কুলশিশুদের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ১২ বছরের কম বয়সী শিশুরা টিকা না পেলেও তাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার হার বড়দের তুলনায় কম। গত জুলাইয়ে প্রকাশিত ওই জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, প্রতি ৫০ হাজার শিশুর মধ্যে মাত্র একটি শিশুকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) যেতে হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি এক মিলিয়ন শিশুর মধ্যে মাত্র দু’জন শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

জাপানের এক দল শিশু বিশেষজ্ঞ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোনোভাবেই মাস্ক পরানো যাবে না। কারণ এতে শ্বাস নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে যায় এবং শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার যথেষ্ট ঝুঁকি তৈরি হয়। দেশটির প্যাডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, মাস্ক শিশুদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মাস্ক পরার পর শিশুরা সহজে শ্বাস নিতে পারে না। কারণ তাদের নাকের ছিদ্র অনেক ছোট। এতে তাদের বুকে চাপ তৈরি হয়। এমনকি মাস্ক তাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকিও তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) ও আমেরিকান একাডেমি অব প্যাডিয়াট্রিকস এ গবেষণা ফলাফলের সঙ্গে একমত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তবে অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে- শিশুর জন্য ঝুঁকি তৈরি করে এমন জনসমাগমস্থল থেকে তাদের দূরে রাখা জরুরি। একই সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল বা কোনো আক্রান্তের সংস্পর্শে এলে তাদের উচিত শিশুদের কাছ থেকে দূরে থাকা। এসব সতর্কতা অবলম্বন করলে মাস্ক ছাড়া শিশুরা স্কুলে তাদের মতো করে নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে