মানবদেহের সবচেয়ে জটিল রোগগুলোর মধ্যে বৃহদন্ত্রের ক্যানসার একটি। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা না দেওয়া গেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়।
মলাশয়ের ক্যানসার সাধারণত পায়ুপথে রক্তক্ষরণ এবং মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। মলত্যাগের বেগ এলে রোগী তড়িঘড়ি করে টয়লেটে যায় এবং শ্লেষ্মাযুক্ত রক্ত মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন দ্য রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের ল্যাপারোস্কপিক কলোরেক্টাল ও জেনারেল সার্জন অধ্যাপক ডা. রকিবুল আনোয়ার।
প্রথম দিকে যেহেতু উপসর্গ তত মারাত্মক নয়, রোগী নিজ থেকেই অনেক সময় চিন্তা করে যে হয়তোবা আমাশয় আক্রান্ত হয়েছে অথবা তার পাইলস হতে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমাদের দেশে পাইলস অথবা পেট খারাপ বা আমাশয় আক্রান্ত হওয়া বেশ সাধারণ ব্যাপার।
ভেজাল, নষ্ট হওয়া খাবার-দাবারে অথবা রেস্তোরাঁয় খেয়ে পেট খারাপ বা মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তনকে সহজভাবে গ্রহণ করা আমাদের রোগীদের জন্য স্বাভাবিক। সে কারণে পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন, কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা পাতলা পায়খানা উপসর্গগুলো যে ক্যানসারেরও উপসর্গ সেটি অনুধাবন করতে রোগীর অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে, যদিও এর মাঝে ক্যানসারটি বড় হয়ে মলাশয়/বৃহদন্ত্রের অকুস্থলের চারপাশে এবং পরবর্তী সময়ে ফুসফুস ও যকৃতে ছড়িয়ে যায়।
এ সময় পেটে ব্যথা হয়, মল আটকে গিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফুলে ওঠে। অপারেশন ছাড়া রোগ মুক্তির জন্য রোগী হাতুড়ে ডাক্তারসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে চিকিৎসার শরণাপন্ন হয়ে প্রকৃত চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যাওয়ার সুযোগ হারান। ক্যানসার মলাশয় এবং মলদ্বারের পাশের স্নায়ু ও মাংসপেশিতে ছড়িয়ে পায়ুপথে প্রচণ্ড ব্যথার জন্ম দেয়।
রেক্টাম বা মলাশয় এবং কোলন অথবা বৃহদন্ত্রের ক্যানসারের জন্য ল্যাপারোস্কপি পদ্ধতিতে অপারেশনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেট না কেটে ও মলদ্বার অপসারণ না করে ক্যানসারটি সম্পূর্ণরূপে ব্যবচ্ছেদ করে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয়। আগের দিনে সচরাচর পায়ুপথ বা মলদ্বার ফেলে দিয়ে পেটের ডান বা বাঁয়ের যে কোনো একপাশে কৃত্রিম মলদ্বার বানিয়ে সেখানে ব্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হতো।
মল ওই ব্যাগে জমা হতো এবং রোগীকে সময়মতো মাঝে মাঝে ব্যাগ পরিষ্কার করে নিতে হতো। এ স্থায়ী ব্যাগ লাগানো অনেক রোগীর কাছে অগ্রহণযোগ্য, সামাজিকভাবে অমর্যাদাপূর্ণ, অরুচিসম্মত হিসেবে গণ্য করে এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে যেভাবেই হোক রোগী স্থায়ী ব্যাগ পরিহার করার চেষ্টা করে। মলাশয় অথবা মলদ্বারের সাধারণ অসুখ যেগুলো ক্যানসারের মতো মারাত্মক নয় যেমন- ফিশার, পাইলস ইত্যাদির উপসর্গ এবং ক্যানসারের উপসর্গ একই রকম হতে পারে। রোগীর ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং কলনোস্কপি ও বায়োপসি করে রোগ নির্ণয়ের পর সিটি এবং এমআরআই দ্বারা স্টেজিং করার পরই চিকিৎসা প্রণালি নির্ধারণ করে চিকিৎসা শুরু করা হয়।
আগে প্রচলিত অথবা অত্যাধুনিক অপারেশনই মলাশয় এবং বৃহদন্ত্রের ক্যানসারের চিকিৎসার মুখ্য পদ্ধতি। আধুনিক পদ্ধতিতে ল্যাপারোস্কপি বা রোবটের মাধ্যমে অপারেশন করে আশপাশের গ্লান্ড যেখানে ক্যানসার ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে, সেই গ্লান্ডসহ ক্যানসারটিকে সম্পূর্ণ অপসারণ করা।
প্রায় নব্বই ভাগেরও বেশি ক্ষেত্রে পেট না কেটে ও মলদ্বার অপসারণ না করে ক্যানসারটি সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া সম্ভব হয়। অস্ত্রোপচারের আগে অথবা পরে কেমোথেরাপি অথবা/ রেডিওথেরাপির প্রয়োজন আছে কিংবা নেই সেটি নির্ভর করে ক্যানসার স্টেজিংয়ের ওপর। ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে অপারেশনের পর মলদ্বার অক্ষত থাকে, রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে, ক্যানসার থেকে আরোগ্য পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত স্বাভাবিক কাজকর্ম ফিরে যেতে পারে।