রোজা রেখে দীর্ঘ সময় সব ধরনের পানাহার থেকে দূরে থাকতে হয়। এ সময় শরীর ও ত্বক পানিশূন্যতায় নাজুক হয়ে পড়ে। এ জন্য খাবারদাবার ও ত্বকের যত্নে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুমাইয়া মামুন। লিখেছেন মোনালিসা মেহরিন
ত্বকের পানিশূন্যতা পূরণে
আমাদের শরীরের প্রায় ৭৫ শতাংশই পানি। এই পানি আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে কোষগুলোকে সচল ও সতেজ করে রাখে। কোনো কারণে শরীরে পানির অভাব হলে ত্বক নির্জীব হয়ে পড়ে। আয়নার সামনে নিজেকে দেখলে ত্বক ফ্যাকাসে মনে হয়। ত্বক ফেটে যায়। ত্বকের কোমলতা কমে যায়, উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। ত্বক খসখসে ও শুকনা মনে হতে পারে।
কী কী কারণে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়
নানা কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, কলেরা, অতিরিক্ত ঘাম, পুড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ব্যায়াম, অতিরিক্ত পরিশ্রম করা ইত্যাদি। তবে পানিশূন্যতার সবচেয়ে প্রধান কারণ প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পান না করা।
ত্বকের পানিশূন্যতা পূরণে
কী কী কারণে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়
নানা কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, কলেরা, অতিরিক্ত ঘাম, পুড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ব্যায়াম, অতিরিক্ত পরিশ্রম করা ইত্যাদি। তবে পানিশূন্যতার সবচেয়ে প্রধান কারণ প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পান না করা।
শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন—প্রস্রাবের স্বাভারিক রং হারিয়ে যায়। প্রস্রাবের সাদা রঙের পরিবর্তে হলদে বা হলুদ রং ধারণ করে। প্রস্রাবের ঘনত্ব বেড়ে যায়। পানিশূন্যতায় শরীরের রক্তচাপ কমে যায়। এর ফলে শরীরের কোষগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। কোষগ্রন্থিগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘুরিয়ে যায়। চারদিক অন্ধকার মনে হয়। ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, পটাসিয়াম জাতীয় পদার্থ নির্গত হয়। এতে হিট স্ট্রোক হতে পারে। মাংসপেশিতে ব্যথা সৃষ্টি হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। মাথা ব্যথা হয়। ঘুম ঘুম ভাব পায়। অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ হয়। ছোট-বড় সবারই অনেক বেশি তৃষ্ণা পায়। জিহ্বা ও গলা শুকিয়ে আসে।
পানিশূন্যতা পূরণে কী করবেন
তাপমাত্রা যত বাড়ে, শরীরে পানিশূন্যতার পরিমাণও তত বাড়তে থাকে। এখন এমনিতেই বেশ গরম, তার ওপর সারা দিন পানি পান না করে থাকতে হয়। এর প্রভাব পড়ে ত্বকের কোষে। কোষগ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। এ জন্য পানিশূন্যতা পূরণে আগে থেকেই সচেতন এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এখন প্রচুর মৌসুমি ফলমূল পাওয়া যায়। ইফতারে ভাজাপোড়ার পরিবর্তে এসব ফলমূল খেতে হবে। পানিশূন্যতা পূরণে পানিজাতীয় ফল; যেমন—তরমুজ, বাঙ্গি, কলা, ডাবের পানি খেতে পারেন। বিভিন্ন ফলের জুস বা শরবত, লেবুপানি খেলেও উপকার মিলবে। এর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ইফতার থেকে শুরু করে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত যতটা সম্ভব পানি পান করা জরুরি।
সাহরিতেও পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে রাতের খাবার ও সাহরিতে শাকসবজি ও ডালজাতীয় খাবার খেতে হবে। মনে রাখতে হবে, শরীরের ত্বকের বেশির ভাগই কিন্তু পানি। তাই পানির অভাব হলে তা ত্বক তো বটেই, শরীরের অন্য সব স্বাভাবিক কার্যক্রমের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। এর প্রভাব ফুটে ওঠে ত্বকে। এ জন্য এই রমজানে নিয়ম মেনে পানি পান করতে হবে। রোদে কম যাওয়া ভালো। রোদে গেলে ছাতা রাখতে হবে। আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে, যাতে ঘাম কম হয়।