রোজায় দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকতে হয়। এ কারণে শরীরে নানা পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সময় কিডনি, ডায়াবেটিস ও হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের সতর্ক থাকতে হয়।
অনেকে হার্ট অ্যাটাকের ব্যথাকে ভুল করে এসিডিটির পেইন মনে করে এন্টাসিড বা ইনো খেয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে বা তীব্র বুকের ব্যথা নিয়ে রমজান মাসে সন্ধ্যা বেলা ইফতারের পর চিকিৎসকের চেম্বারে বা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চলে আসেন। ইসিজি করার পর প্রতীয়মান হয় যে, রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এবং ততক্ষণে জটিলতা বেড়ে যায়।
রোজায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এড়াতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের কার্ডিওলজির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ উল্লাহ ফিরোজ।
সাধারণত যে কোনো ভারি খাবার দাবারের পর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রচুর খাবার একসঙ্গে গেলে সেগুলোকে সামাল দেওয়ার জন্য পাকস্থলীকে তার কাজ অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে হয়। বেশি কাজ মানেই বেশি শক্তি। এই অতিরিক্ত শক্তির জন্য তার রক্তও দরকার হয় বেশি। পাকস্থলীর মোটামুটি কাছের প্রতিবেশী যেহেতু হার্ট, তখন হার্টকে স্যাক্রিফায়েস করতে হয় বেশ খানিকটা রক্ত। আর ঠিক তখনই ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা।
রোজায় সারা দিন না খেয়ে আমরা স্বাভাবিকভাবেই বেশ ক্ষুধার্ত থাকি। ব্রেইন বারবার সিগনাল পাঠাতে থাকে-খাবার দাও, খাবার দাও। টেবিলে সাজানো সুস্বাদু সব খাবার আর ব্রেইনের সিগনালের ফাঁদে আমরা খুব সহজেই ধরা পড়ে যাই। গোগ্রাসে প্রচুর খাবার গিলতে থাকি। তারপর আমাদের অজান্তেই শরীরের মধ্যে চলতে থাকে আন্তঃপ্রতিবেশী রক্ত আদান-প্রদান।
কখনো কখনো হজম প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করতে শরীরের বিভিন্ন অর্গান বা অঙ্গ থেকে পাকস্থলীর দিকে রক্তের ডাইভারসন হয়, এর মাঝে হৃদপিণ্ড বা হার্ট অন্যতম-যেখানে রক্ত চলাচলে স্বল্পতা ঘটে। ফলশ্রুতিতে ভারি খাবার দাবারের ২ ঘণ্টার মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রায় চারগুণ। তাই, ইফতারে খাবার কম খান। দরকার হলে অল্প অল্প করে ২/৩ বারে খান।
ইফতার দু’ধাপে করতে হবে। সেহরির পর থেকে খাওয়া বন্ধ থাকায় ইফতারের সময় পাকস্থলীর আকার দাঁড়ায় ৭৩ মিলিলিটার। এ ছাড়া পাকস্থালীর মিউকাস ঝিল্লিও সংকুচিত অবস্থায় থাকে। পাশাপাশি লিভার, অগ্নাশয়, ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্ত থেকে যেসব এনজাইম হজমে অংশ নেয় তাদের উৎপাদনও বন্ধ থাকে। পাশাপাশি রোজা থাকায় হার্টের উপরও চাপ কম থাকে।
তাই নিয়ম হলো-ইফতার দু’ধাপে করা। প্রথম ধাপে শুধু একগ্লাস পানি ও ২/৩টি খেজুর খাওয়া উচিৎ। তারপর মাগরিবের সালাত আদায় করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ২য় ধাপে ইফতার করা ভালো।
এভাবে ইফতার করার উপকারিতা হল-
* এসিডিটি, গলা বুক জ্বলা ও টক ঢেকুর হয় না।
* পেটে জ্বালাপোড়া করে না এবং বদহজম হয় না।
* ইফতারের পর ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব আসে না।
* ইফতারের পর শরীর অস্বাভাবিক ঘামে না।
* ইফতারে পরিমিত খেলে রক্তে ব্লাড গ্লুকোজ বাড়ে না, ফলে মাথা ঝিম ঝিম করে না।