চক্ষু ও মানসিক বিশেষজ্ঞরা জানান, মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের মতো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের প্রতি আসক্তির কারণে শিশুদের দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মানসিক বিকাশ। ছয় থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের চোখের ও মানসিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেখা যাচ্ছে। যে শিশুরা মানসিক সমস্যায় ভুগছে, এর পেছনে অন্যতম কারণ মোবাইল আসক্তি। শিশুর ক্ষীণ দৃষ্টির অন্যতম কারণও মোবাইলসহ ইলেকট্রনিক্স পণ্যের আসক্তি। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এবং বাইরে খেলার সুযোগ না থাকায় বেশিরভাগ স্কুলপড়ুয়া শিশু ঘরে থেকে মোবাইলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করছে। কার্টুন ও মুভি দেখা, গেমস খেলার মতো বিনোদনমূলক কাজগুলো শিশুরা মোবাইলেই বেশি করছে। মোবাইল স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘসময় তাকিয়ে থাকায় তাদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বনশ্রীর গৃহিণী নাদিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমার তিন বছর বয়সী মেয়ে রাইসা মোবাইল দেখলেই হাতে নিতে চায়। মোবাইলে ছড়া না দেখলে কিছুই খেতে চায় না। মোবাইল সরিয়ে রাখলেই রেগে যায়। কান্না শুরু করে। এত ছোট শিশুর মোবাইল আসক্তি ভালো না বুঝতে পারছি; কিন্তু না দিলেও সমস্যা।’
লাইন্স আই হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. জাফরুল হাসান বলেন, আমাদের কাছে অভিভাবকরা যে শিশুদের নিয়ে আসছেন, তাদের অনেকেরই দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে পড়ায় কম দেখছে। মোবাইল ফোন আসক্তির জন্যই এমনটি হয়েছে। অভিভাবকদের আমরা শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের জন্য নিরুৎসাহিত করছি। তা না হলে চোখের মাইনাস পাওয়ার আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারে শিশুর নিয়ার ভিশনের দূরত্ব কমে যায়। দৃষ্টি তখন মাইনাসের দিকে চলে যায়। মোবাইল রশ্মিও দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি করছে। মোবাইল ব্যবহারের সময় একটি দিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়ায় এবং অন্য শারীরিক কসরত কমে যাওয়ায় শিশুর মেজাজও খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস-এর সভাপতি ও স্কয়ার হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, মোবাইলসহ অন্য ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের আসক্তির ফলে শিশুর ক্ষতি ভয়ংকর পর্যায়ে চলে গেছে। এই সমস্যায় পড়ে প্রচুর অভিভাবক নিজের সন্তানকে চিকিৎসার জন্য আনছেন। ছোট শিশু থেকে শুরু করে শিশু-কিশোররাও এসব ডিভাইসে আসক্ত। বিমুখ হয়ে পড়ছে লেখাপড়ায়। অসামাজিক হয়ে পড়ছে। সর্বোপরি তাদের ব্যক্তিত্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শিশুরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে এবং তাদের মানসিক বিকাশ হচ্ছে না। এ ধরনের শিশুর একসময় বিষণœতা ও উদ্বিগ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তার মতে, এ অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সন্তানকে কতটা সময় এ ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করতে দেবেন তা ঠিক করতে হবে। সন্তান বায়না করলেই তাকে মোবাইলসহ অন্য ডিভাইস ব্যবহার করতে না দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় যেতে হবে।