মাঝে মাঝে কিছু কিছু ছেলে-মেয়ে অস্বাভাবিক দৈহিক উচ্চতা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে বাধ্য হয়। সেটি বাংলাদেশ বা পৃথিবীর যে কোন দেশের জন্য সত্য হতে পারে।
যদি কোন শিশুর দৈহিক উচ্চতা তার জনগণের আদর্শ দৈহিক উচ্চতার তুলনায় ৯৭ শতাংশের বেশি হয় (+2 SD-এর বেশি) তবে তাকে অস্বাভাবিক দৈহিক উচ্চতা বলা হবে। সারা পৃথিবীর প্রতি ১০০ জন শিশু-কিশোরের মধ্যে ৩ জন এরূপ। তবে কোন কোন পরিবারের সবাই বা অধিকাংশই এ আকারের হতে পারে। সেক্ষেত্রে একে কোন রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হবে কিনা তা ভাবনার বিষয়।
একটি শিশুর দৈহিক উচ্চতা অস্বাভাবিক বেশি বা কম তা বোঝার জন্য বাবা-মার উচ্চতা সাপেক্ষে এ শিশুটির কাক্সিক্ষত প্রাপ্ত বয়স্ক উচ্চতার (Mid Parental Hight) বের করে নেয়া যায়। এটি মোটামুটি একটি ভাল অনুমান দিতে পারবে। যেহেতু বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের দৈহিক উচ্চতা-কাঠামো বিভিন্ন রকম, তাই ওই শিশু বা কিশোরের বাবা-মার উচ্চতার সঙ্গে তার উচ্চতা তুলনা করাই সবচেয়ে সঠিক হতে পারে।
মায়ের ও শিশুর পুষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পুষ্টির উপর ভিত্তি করেই শিশুর দৈহিক ওজন ও উচ্চতা তৈরি হবে। শিশু-কিশোরদের অস্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধির মূল্যায়ন
মা-বাবার কাছ থেকে শিশুটির দৈহিক বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বা হার জেনে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে শিশুর জন্মকালের দৈহিক ওজন ও আকার গুরুত্বপূর্ণভাবে বিবেচনা করা হবে। কিছু কিছু শিশু শুরু থেকেই লম্বাটে। কেউ কেউ আবার একটা নির্দিষ্ট সময় পর হঠাৎ করেই লম্বা হতে থাকে। এগুলোই শিশুর রোগটির ধরন সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। যদি শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, পারিবারিক ধারাবাহিকতার অংশ হয়, সেটিও জেনে নেয়া যাবে। কিছু ক্রমজোমাল ও জেনেটিক সমস্যা অস্বাভাবিক দৈহিক উচ্চতার কারণ হতে পারে। আবার হরমোনজনিত সমস্যাও এর কারণ হয়। মারফান সিন্ড্রোম (Marfan Syndrome) ও ক্লিনেফেল্টার সিন্ড্রোম (Klinefelter Syndrome) এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারণ। এ দুটি সমস্যা শনাক্তকরণের এ জন্য শারীরিক গঠনের মাপঝোক যেমন- মোট উচ্চতা, শরীরের উপরের অংশ ও নিচের অংশের উচ্চতার অনুপাত, প্রসারিত দুই হাতের মোট দৈর্ঘ্য, মুখগহ্বরের গভীরতা, চোখের কর্নিয়া ও লেন্সের অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি দেখতে হবে। ক্লিনেফেল্টার সিন্ড্রোমে কিশোরটির জৈবন প্রাপ্তি বিলম্বিত বা অসম্ভব হতে পারে। দুই ক্ষেত্রেই ক্যারিও টাইপিং করে রোগ শনাক্তকরণের চেষ্টা করা হতে পারে।
খুব অল্প সময়ে দ্রুত দৈহিক উচ্চতা বৃদ্ধি প্রাপ্তিও ঘটতে পারে কারো কারও ক্ষেত্রে। যা উপরে উল্লেখিত ঘটনাসমূহের মতো নয়। এক্ষেত্রে সারা দেহের উচ্চতা বৃদ্ধিও ঘটতে পারে। আবার কোন কোন সময় শরীরের নির্দিষ্ট অংশের বৃদ্ধিও হতে পারে। এ সমস্যাটির নাম জায়গান্টিজম (Gigantism Ges Acromegaly)। এক্ষেত্রে দৈহিক কাঠামোর সব অংশেরই বৃদ্ধি ঘটে (হাড়, মাংশপেশি, বিভিন্ন অংঙ্গ প্রত্যঙ্গ) যদি এ সমস্যাটি দৈহিক বৃদ্ধি সম্পন্ন হবার আগে শুরু হয়। আর দৈহিক বৃদ্ধি সম্পন্ন হবার পরে এ সমস্যা শুরু হয়, তবে বৃদ্ধিটা নির্দিষ্ট কিছু এলাকাতে সীমাবদ্ধ থাকে (হাত, পা, নিচের চোয়াল ইত্যাদি) এ সমস্যাটি গ্রোথ হরমোন (Groth Hormone) এর অতিরিক্ত নিঃসরণের কারণে হয়। গ্রোথ হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ হতে পারে পিটুইটারির টিউমারের কারণে। সে ক্ষেত্রে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন- মাথা ব্যথা, দৃষ্টি সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি। এটিই শনাক্তকরণের জন্য রক্তে গ্রোথ হরমোনের পরিমাণ পিটুইটারি গ্রন্থির নিরূপন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হতে পারে। এগুলো বাদেও আরও কিছু কারণ আছে, যেগুলো খুব কম ক্ষেত্রে হলেও অস্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
লেখক :
ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।