শীতকালে কেন মূত্রনালী সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে?

0
13
Spread the love

শীত ঋতুতে ঠাণ্ডা-কাশির সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। কেননা, এ সময়ে অনেকেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তবে এই মাসগুলোতে আরেকটি রোগে ভোগার সম্ভাবনা বাড়ে, সেটা হল ‘ইরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনস (ইউটিআই)’ বা মূত্রনালীর সংক্রমণ। মূত্রনালীর মাধ্যমে কোনোভাবে যদি শরীরের জীবাণুর প্রবেশ করে তাহলে নানারকম সংক্রমণ জনিত সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন।

চিকিৎসকদের মতে, এজন্য শুধু ঠাণ্ডা আবহাওয়া নয় বরং ভিটামিন ডি’র স্বল্পতাও দায়ী। কারণ শীতকালে গায়ে রোদ লাগে কম। ফলে দেহে এই ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘নর্থওয়েল স্ট্যাটেন আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটি হসপিটাল’য়ের পুরুষ বন্ধ্যাত্ব-বিষয়ক বিভাগের পরিচালক ডা. জোনাথান ডাভিলা ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, খারাপ ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রয়োজন হয় ভিটামিন ডি। এর অভাবে নানান শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, এর মধ্যে মূত্রনালীর সংক্রমণও আছে।

ভিটামিন ডি ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পেপটাইডস’য়ের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। পেপটাইডস হল এক ধরনের অণু যাতে এক বা একাধিন অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, এগুলো মিলিত হয়ে প্রোটিন তৈরি করে।

এই বিষয়ে ডা. ডাভিলা বলেন, ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করার জন্য ‘পেপটাইডস’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তাই ভিটামিন ডি’র স্বল্পতার কারণে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে মূত্রনালীতে সংক্রমণ ঘটায় এমন জীবাণু, যেমন- ই. কোলি’তে সহজেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

বিভিন্ন গবেষণাতেও দেখা গেছে যে, যারা মূত্রনালীর সংক্রমণে ভোগেন, তাদের উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ভিটামিন ডি’র স্বল্পতা রয়েছে।

মূত্রনালীর সংক্রমণ রোধ করতে কি পারে ভিটামিন ডি?

ভিটামিন ডি’র মাত্রার সাথে মূত্রনালীর সংক্রমণ হওয়ার সংযোগ থাকলেও, পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি থাকলে কি এই রোগ থেকে পরিত্রাণ মিলবে?

এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ডাভিলা বলেন, কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার মাধ্যমে মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে বাঁচা যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করার মাধ্যমে।

‘দি জার্নাল অফ ইউরোলজি’তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, এমন তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে ২০২১ সালে। তবে কী পরিমাণে ভিটামিন ডি’র মাত্রা বাড়ালে এই উপকার মিলবে সে বিষয়টা এখনও পরিষ্কার নয়।

মূত্রনালীর সংক্রমণ রোধে অন্যান্য উপায়

ডা. ডাভিলা বলছেন, যদিও ২০২২ সালের নির্দেশনা অনুসারে ‘আমেরিকান ইউরোলজি অ্যাসোসিয়েশন’ ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট মূত্রনালীর সংক্রমণ রোধের ক্ষেত্রে সুপারিশ করে না। তারমানে এই নয় ভিটামিন ডি কার্যকর নয়। এই বিষয়ে গবেষণা এখনও চলছে।

তাই এই রোগ প্রতিহত করতে আরও কিছু বিষয়ে সাবধাণ থাকার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। যেমন-

যৌন সঙ্গমের পর মূত্র ত্যাগ: শারীরিক মিলনের কারণে মূত্রনালীতে ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি পেতে পারে। আর মূত্রত্যাগের মাধ্যমে এই ব্যাক্টেরিয়া বের করে দেওয়া যায়।

অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ কমানো: অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে দেহে স্বাস্থ্যকর অনজীবের ভারসাম্য হারায়। ফলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

ডি-ম্যানোজ গ্রহণ: এই ‘মনোস্যাকারাইড’ (এক ধরনের কার্বোহাইড্রেইট) যা সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে ফলে পাওয়া যায়। এর সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে মূত্রথলির দেয়ালে ব্যাক্টেরিয়া আটকে থাকা রোধ করতে পারে।

যখনই চাপ আসবে তখনই বাথরুমে যাওয়া: নিয়মিত প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহের বর্জ্য বের হয়ে যায়। যা মূত্রনালীর সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমায়। তাই প্রস্রাবের বেগ পেলে চেপে না রেখে দ্রুত কাজ সারতে হবে।

হাত ও লিঙ্গ সঙ্গমের আগে পরিষ্কার করা: ভালো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার মাধ্যমে মূত্রনালীতে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়।

নারী দের ‘ডুশ’ দেওয়া ও সুগন্ধিযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার কমানো: এগুলো গোপনাঙ্গে ব্যাক্টেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে।

সবসময় সামনে থেকে পেছনে ভালো মতো পরিষ্কার করা: এর ফলে অযাচিত ব্যাক্টেরিয়া পায়ুপথ থেকে যোনিপথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রোধ করা যায়।

সুতির অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে: বাতাস চলাচল করতে পারে এরকম কাপড় ভেজা থাকে না। নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস সবসময় শুকনা রাখার অভ্যাস গড়তে হবে। কারণ ভেজা আর্দ্র অবস্থায় ব্যাক্টেরিয়া গজানোর পরিবেশ পায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে