শীতে পা ও ঠোঁট ফেটে গেলে

0
330

শীতে শুষ্ক ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকার কারণে শুধু পরিবেশের উপরই এর প্রভাব পড়ে না, মানব শরীরের সবচেয়ে বড় অংশ ত্বকের উপরও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ সময়টাতে সাধারণত কারও কারও পায়ের তালু ও ঠোঁট ফেটে যায়, অনেকের আবার রক্ত বের হয়। কারও কারও শুধু শীতকালই নয়, সারা বছরই ঠোঁট শুষ্ক থাকে ও ফাটে। এটা খুবই বিরক্তিকর সমস্যা।

শীতের ঠাণ্ডা হাওয়া ছাড়াও অন্য কোনো বিষয়েও ঠোঁট ফাটাকে বাড়িয়ে দেয়। যেমন বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটার অভ্যাস, ধুমপান, পুষ্টিহীনতা ও ভিটামিনের অভাব যেমন ভিটামিন বি, মিনারেল (আয়রন জিঙ্ক), প্রখর সূর্যের তাপ ও পানিশূন্যতা, রেটিনয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন। বিভিন্ন চর্মরোগ ও পরিপাকতন্ত্রের রোগ আছে তাঁদেরও বেশি ঠোঁট ফাটে।

শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় পায়ের গোড়ালির ত্বক অনেক বেশি শক্ত।

শীতে ত্বকের শুষ্কতা ও ধুলাবালির প্রকোপে গোড়ালি আরও বেশি শক্ত হয়ে পড়ে। এ থেকেই শুরু হয় পা ফাটার সমস্যা। তবে পরিচ্ছন্নতা ও নিয়মিত যত্নের মাধ্যমে পা ফাটার সমস্যা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া সম্ভব।

ঠোঁট ফাটলে করণীয়:
ঠোঁট ফাটা এমন একটি সাধারণ সমস্যা যার জন্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার তেমন কোনো প্রয়োজন হয় না। কিছু বিষয়ে সচেতনতা থাকলে নিজেরাই এই সমস্যার সমাধান করা যায়। যেমন:
* এই আবহাওয়ায় নিয়মিত লিপ বাম, পেট্রোলিয়াম জেলি ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
* প্রতিদিন পানিশূন্যতা রোধে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করবেন।
* খুব ঠাণ্ডা হাওয়া থেকে মুখ বাঁচাতে স্কার্ফ পরতে পারেন।
* চেষ্টা করবেন ংঢ়ভ সমৃদ্ধ লিপ বাম ব্যবহার করতে।

* শীতের দিনে ঠোঁটে প্রসাধনী যেমন: লিপস্টিক ব্যবহার করতে সতর্ক হোন। এগুলো যেন বেশি শুষ্ক বা ম্যাট না হয়। ক্রিম ও ফেইস লিপিস্টিক ব্যবহার করুন এই শীতে।

* জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর চেষ্টা করবেন না বা ঠোঁটের চামড়া টেনে ওঠাবেন না।
* রাতের বেলা মোটা লেয়ার করে ভেসলিন দিয়ে ঘুমান। পরদিন সকালে আলতো করে ঘষে তুলে ফেলুন। এতে ত্বকের মরা চামড়াগুলো উঠে যাবে।

এ সময় আরও একটি সমস্যা সেটা হলো পা ফাটার কষ্ট। কারও কারও এই পা ফাটা এতবেশি হতে পারে যে রক্ত বের হয় এবং ফাটা অংশ দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করে পায়ে ঝুঁকিপূর্ণ সংক্রমণ করতে পারে। সপ্তাহে অন্তত একদিন পায়ের যত্ন নিতে হবে।

যেসব কারণে পা ফাটে:
পুরো শরীরের মধ্যে পা ও এর তলা সবচেয়ে শুষ্ক। কেননা দেহের অন্যত্র ত্বকের মাঝে তৈলগ্রন্থি থাকলেও পায়ের তালুতে তা নেই। কেবল ঘর্মগ্রন্থি আছে। ঠাণ্ডার দিনে ঘামও তেমন হয় না বলে পায়ের তলার আর্দ্র্যতা সহজে বিনষ্ট হয়। ফলে পা শুষ্ক হয়ে পড়ে ও ত্বক ফেটে যায়।

পা যখন ফাটে, তখন ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে, চুলকাতে পারে। এমনকি পায়ের ত্বক খোসার মতো উঠে গিয়ে ঝরে পড়তে পারে। কখনো রক্তাক্ত হতে পারে, ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।

যারা বেশি পা ফাটা সমস্যায় পড়েন:
এ সময়ে যেকোনো মানুষেরই পা ফাটে, কিন্তু কারও কারও এই সমস্যা খুব বেশি প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে। যেমন: যাদের থাইরয়েডে সমস্যা আছে, তাদের এমনিতেই ত্বক খুব শুষ্ক থাকে, একই কথা ডায়াবেটিসের রোগীদের বেলায়ও প্রযোজ্য। ডায়াবেটিসে স্নায়ুজনিত সমস্যায় পায়ের আর্দ্রতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অনুভূতিতেও সমস্যা দেখা দেয়। যাদের সোরিয়াসিস, অ্যাকজিমা বা কোনো চর্মরোগ আছে, তাদের পায়ে সমস্যা বেশি হয় এবং এই শীতে এসব রোগ অনেক বেড়ে যায়। বয়স্ক ব্যক্তিদের পা ফাটার সমস্যা বেশি।

পা ফাটা প্রতিরোধে করণীয়: খুব ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় পায়ে মোজা পরুন, প্রতিদিন গোসল বা পা ভেজানোর পর শুকনো তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে নিন। গোড়ালি ও তালুতে পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন মাখুন। বিশেষ করে রাতের বেলা ঘুমানোর আগে অবশ্যই গোড়ালি ও তালুতে পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন মাখুন। সপ্তাহে একদিন পায়ের বিশেষ যত্ন নিন। গামলায় লেবুর রস মিশ্রিত হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে,পা ঘষে মৃত কোষ ফেলে দিন। লেবুর রসে যে সাইট্রিক এসিড আছে তা মৃত কোষ ঝরতে সাহায্য করবে। তারপর পা মুছে পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন লাগিয়ে নিন। জটিলতা বেশি হলে বা পা, ঠোট দিয়ে রক্ত পড়লে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

লেখক, অ্যায়েসথেটিক’স ডার্মাটোলজিস্ট ও এন্টি এজিং এক্সপার্ট,
চট্টগ্রাম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে