সারা বিশ্বে প্রতি ৩৩ জনে একজন শিশু কোনো না কোনো ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। নবজাতকের শতকরা ২১ ভাগ মৃত্যুই জন্মগত ত্রুটির কারণে হয়। তবে চিকিৎসার মান উন্নত হওয়ায় এই মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন কমছে। জন্মগত ত্রুটি নিয়ে লিখেছেন—অধ্যাপক ডা. বিজয় কৃষ্ণ দাস, শিশু সার্জারি বিভাগ, কেয়ার মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা
যেকোনো ধরনের শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করলে সেটিকে বলা হয় জন্মগত ত্রুটি।
জন্মগত ত্রুটি বাহ্যিক কিংবা অভ্যন্তরীণ হতে পারে। জন্মগত ত্রুটির কারণে শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা শারীরিক-মানসিক বিকাশজনিত অক্ষমতা বা প্রতিবন্ধিতা হতে পারে।
কারণ
জন্মগত ত্রুটির সঠিক কারণ যদিও জানা নেই। তবে সাধারণত কারণ হিসেবে নিচের কারণগুলো ধরা হয়ে থাকে।
♦ বংশগত (মা/বাবা)।
♦ নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে।
♦ মা-বাবার অতি অল্প বয়স কিংবা অধিক বয়স (২০ বছরের কম বা ৩৫ বছরের বেশি)।
♦ পরিবেশদূষণ, তেজস্ক্রিয়তা।
♦ গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ইত্যাদির স্বল্পতা।
♦ গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা, পুষ্টিহীনতা/স্থূলতা।
♦ মা-বাবার তামাক, ধূমপান মদ ইত্যাদি নেশা করা।
♦ গর্ভাবস্থায় ভুল ওষুধ সেবন।
♦ মায়ের গর্ভের পানিস্বল্পতা।
♦ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন—ঘুমের ওষুধ, বেদনানাশক, মানসিক রোগের ওষুধ, মৃগী রোগের ওষুধ, বিভিন্ন প্রকার কবিরাজি, হোমিও ওষুধ ইত্যাদি।
♦ গর্ভাবস্থায় কোনো জটিল রোগ, যেমন—ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রোগ-জীবাণু সংক্রমণ।
♦ গর্ভাবস্থায় দারিদ্র্যতা, মানসিক অশান্তি ইত্যাদি।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে পারলে জন্মগত ক্রটি অনেকাংশেই কম হয়।
♦ গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে থাকা।
♦ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা।
♦ গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক প্রশান্তি।
♦ গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড, ভিটামিন বি ইত্যাদি ভিটামিনজাতীয় খাবার গ্রহণ করা।
♦ তামাক, ধূমপান, মদ ইত্যাদি পরিহার করা।
♦ নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে পরিহার করা।
♦ সঠিক বয়সে সন্তান ধারণ করা (২০-৩৫ বছর)।
♦ বিয়ের আগে/সন্তান ধারণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
♦ অপ্রতিকারযোগ্য মারাত্মক বিকৃত শিশুকে গর্ভপাত করা।
চিকিৎসা
জন্মগত ত্রুটির জন্য সময়মতো চিকিৎসানিলে প্রায় সবাই সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়। এই ধরনের ত্রুটির চিকিত্সা অপারেশন। জন্মগত ত্রুটি দেখলেই শিশু সার্জনের পরামর্শ নিন। বাংলাদেশে সব মেডিক্যাল কলেজে শিশু সার্জারি বিভাগে এই ধরনের চিকিৎসা বিনা মূল্যে হয়। সময়মতো চিকিৎসা নিয়ে শিশুকে অকালমৃত্যু অথবা পঙ্গুত্বের হাত থেকে রক্ষা করুন।